BLANTERVIO103

ভালোবাসার চড়াই উৎরাই- ১ম পর্ব

ভালোবাসার চড়াই উৎরাই- ১ম পর্ব
Wednesday, June 29, 2022

হ্যালো ব্রো, স্বাগতম, সবাইকে, আমার আজকের আরেকটা নতুন টিউটোরিয়ালে । আশা করি সবাই খুবই ভালো আছেন। ভালো তো থাকারই কথা, কারন trickbd র সাথে থাকলে সবাই খুব ভালো থাকে । আর ভালো থাকার জন্যই মানুষ ট্রিকবিডিতে আসে। চলুন শুরু করা যাক।

আজকে আমি আপনাদেরকে একটি অসাধারন রোমান্টিক গল্পের কিছু অংশ। পরবর্তী অংশ আমি পরবর্তী আরেকটি পোস্টে দেয়ার চেষ্টা করবো যদি আপনাদের অনুপ্রেরণা পাই ।


গল্পের নাম:
“ভালোবাসার চড়াই উৎরাই”

ঢাকার ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটে থাকে দুই চাচা-ভাতিজা। দু’জনেই মোবাইল কম্পানিতে চাকুরি করে। তাদের গ্রামের বাড়ি পূর্বধলা ।

একদিন তারা অফিস শেষ করে বাসায় আসে। তারপর তারা খাওয়া দাওয়া শেষ করে টেলিভিশন দেখতে বসে। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন ভাতিজা চাচাকে বলে, চাচা তোমাকে কত করে বলি তুমি একটা বিয়ে কর। চাচা, একটা কেন দু’ইটা বলতে পারিস না। আহ্ চাচা খেয়াল করো না তো। সবদিক একটু চিন্তা করে দেখ। প্রথম দিক হল— তোমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে তোমার মাথায়ও টাক হতে শুরু করেছে। (চাচা মাথায় হাত দিয়ে দেখছে) ক’দিন পরে তোমাকে কোন মেয়েই বিয়ে করবে না। চাচা – এই কথা তুই আগে বললি না কেন?

চাচা আরও শুন – ভাতিজা

হে আরও হতবিহুম্বল চাচা ।

তুমি আমি বাড়ি থেকে কত দূরে এই ঢাকা শহরে চাকুরি করি খাওয়া থাকাতেই অর্ধেক চলে যায়। তাছাড়া বুয়ার রান্নাও তো ভাল নয়। তাছাড়া চাল, ডাল, কাচাবাজারের অর্ধেকেই তো চুরি করে।

চাচা তুই ঠিকই বলেছিস। আচ্ছা মিথান বিয়ে করার পর বউ যদি রান্না করতে

না চায় ।

মিথান সেজন্য তুমি গ্রামের একটা ভাল মেয়েকে বিয়ে করবে।

চাচা-ভাতিজা সত্যিই তোর মাথায় অনেক বুদ্ধি। এই মাস শেষে বাড়িতে গিয়ে একটা ঘটক ধরব।

মিথান বলল- চাচা আর যাই বল আমার চাচী কিন্তু খুব সুন্দরী হতে হবে।

চাচা- অবশ্যই ।

চাচা হেসে ভাতিজাকে বলল চল এখন শুয়ে পড়ি।

ভাতিজা – চল।

মিথান লাইট অফ করল। পরে তারা নিজ নিজ বিছানায় শুয়ে পড়ল।

রাত সাড়ে বারটা।

মিথান স্বপ্নে দেখল তার মা খুব অসুস্থ। জ্বরে ছটপট করছে। আর মিথানকে বলল, বাবা একটু পানি দিবে?

মিথান কাঁথা ফেলে দিয়ে উঠে বসল।

হ্যাঁ মা অসুস্থ (কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে)

মাকে একটু ফোন করি। চাচা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

মিথান তার মার নাম্বারে ডায়েল করল। কিন্তু ঢুকছে না।
মিথান অস্থির হয়ে উঠছে। বলছে

মার নাম্বার বন্ধ। এখন আমি কি করি?

ও… মিশির নতুন নাম্বারে ফোন দেই।

মিথান তার ফোন থেকে তার বোন মিশির নাম্বার খোঁজছে।

হঠাৎ করে তার মনে পড়ল যে মিশির তো নতুন ফোন নিয়েছে। মিশির নাম্বারটা
মিথেনের ফোনের Save-এ নেই। পরে মিথান টেবিল থেকে একটা খাতা
নিয়ে মিশির নাম্বার নিয়ে ডায়াল করল।

ফোন বাজছে কিন্তু রিসিভ করছে না। কয়েক বার কল দেওয়ার পর

হ্যালো, কে? (অপরিচিত কণ্ট)

হ্যা আপনি কাকে চান? আমি মিথান বলছি। আসলে আমি আমার বোনের

নাম্বারে ফোন দিয়েছিলাম। ভুল হয়ে আপনার নাম্বারে ঢুকে গেছে।
ফাইজলামি করেন না, এত রাতে বোনের নাম্বারে ফোন দিয়েছিলেন?
আসলে মা অসুস্থ স্বপ্নে দেখেছি তো সেজন্য আর কি।
মিথান।

ও আমি দুঃখিত। তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি আপনার বোনের নাম্বারে ফোন
দেন।

ঠিক আছে আপনি কিছু মনে করবেন না।

যাই – মিথান ভাই, আপরিচিত কণ্ঠস্বর।

তারপর মিথান আবার খাতা দেখে মিশির নাম্বারে ডায়েল করল। এই বার মিশি

রিসিভ করল।

হ্যালো ভাইয়া রাতে ফোন দিলি যে?

মিথান – স্বপ্নে দেখলাম মা অসুস্থ। মার কোন অসুখ বিসুখ আছে নাকি রে?

মিশি – না । তুই এসে মাকে দেখে যা।

মিথান – আসব তো কয়েক দিন পর। আচ্ছা মিশি এখন তো অনেক রাত।
রেখে দেই পরে কথা বলব নে।

মিশি– আচ্ছা।

বালিশের কাছে ফোনটা রেখে মিথান শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করে সে ঘুমানোর
চেষ্টা করল। কিন্তু চাচা এমন ভাবে নাক ডাকছে যে তার ঘুমানো সম্ভব হচ্ছিল
না। এবার সে চিৎ হয়ে শুইল আর ভাবতে থাকল। অজানা কণ্ঠস্বরের সেই
মেয়েটির কথা। মনের অজান্তেই সে একজনের ঘুম ভাঙাল। মিথান মনে মনে
ভাবছে মেয়েটির নাম্বারে আর একবার ফোন দিলে কেমন হবে। সে সিদ্ধান্ত
নিতে পারছে না যে ফোন দিবে, না দিবে না।

এক পর্যায়ে কোন হেসিটেশন ছাড়াই মিথান অজানা কণ্ঠস্বরের মেয়েটির কাছে
ফোন দিল। একবার বাজতেই মেয়েটি রিসিভ করে কোন কথা বলল না।
হ্যালো- মিথান

হ্যাঁ, আপনার মা কি সত্যিই অসুস্থ? অপরিচিত কণ্ঠস্বর।
না, আপনি এখনো ঘুমাননি?

আসলে রাতে আমার একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে সহজে ঘুম আসে না।
ওমা আপনার ঘুম আর আমার ঘুমের এত মিল- মিথান।

আচ্ছা আপনার বোনের নাম কি?

মিশি – মিথান।

মিশি – এত খুবই সুন্দর নাম।

আমার নাম রেখে আমার বোনের নাম জিজ্ঞেস করলেন যে? আমার কোন বোন
নেই তো তাই— আমার নাম মিথান। আমি একটা মোবাইল কম্পানিতে চাকুরি
করি। আমার চাচাও একই চাকুরি করি। দু’জন এক সাথেই ঢাকায় থাকি। আর
আমাদের গ্রাম পূর্বধলা ।
অপরিচিত কণ্ঠস্বর তার পরে বলল

সত্যি বলছেন তো

মিথান ছি: ছি: ছি:। মানুষ সম্পর্কে আপনার নেতিবাচক ধারণা এত প্রকট।
আমি কাউকে সহজে বিশ্বাস করি না।কিন্তু কেউ যদি নিজেকে বিশ্বাসী প্রমাণ
করে তাহলে তাকে অবিশ্বাস করি না। আমার পরিচয়টা সত্য বিশ্বাস করা না
করা আপনার ব্যাপার। আচ্ছা আপনার নামটা কি বলবেন?

অপরিচিত কণ্ঠস্বর- চন্দনা কুড়ি।
মিথান – আপনি চন্দনা কুড়ি। খুব সুন্দর।

কুড়ি- আসলে আমার নামটাই সুন্দর। আমি সুন্দর নই ।

মিথান- কে বলেছে? আপনার কণ্ঠ, কথা দু’টিই সুন্দর।
কুড়ি- আপনার কাল অফিস নেই ।

মিথান- হ্যা ।

কুড়ি – ঘুমাতে যাবেন না।

মিথান – কেন আমার সাথে কথা বলতে আপনার ভাল লাগছে না?

কুড়ি- রেখে দিন নয়তো সকালে উঠতে পারবেন না।

মিথান- আপনি খুব ভাল মেয়ে। আমার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন, বোনের
নাম জিজ্ঞেস করলেন। আর আমার অফিস নিয়েও চিন্তা করলেন।
কুড়ি

ভালো না ছাই। আমাদের এলাকায় আমি সবচেয়ে দুষ্ট।

মিথান- কুড়ি, আপনার ঠিকানা আর আপনি কি করেন তা বললে আমি রেখে দিব।

কুড়ি- আমি ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ার এ পড়ি আর ঠিকানা আরিচাঘাট । মিথান- আমি আপনাকে কখন ফোন দেব?

কুড়ি- আসলে আমার বাবা মা ভাই কেউ ফোনে কথা বলা পছন্দ করে না। মিথান- তাহলে আপনার সুযোগ মত আমাকে ফোন দিলে খুশি হব।

কুড়ি- না, মানে ফোনে কথা বলা আমারও পছন্দ না মিথান- আমি আমার জীবনের প্রথম একজনকে ফোন দেয়ার কথা বললাম। (বলে মিথান দীর্ঘশ্বাস টানল)। আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমিই আপনাকে মাঝে মাঝে ফোন দিব এতে যদি আপনি বিরক্ত হোন তাহলে দিব না। আচ্ছা রাখছি তাহলে বাই।

কুড়ি- বাই ।

তারপর মিথান রুমে গিয়ে কাঁথা নিয়ে শুয়ে পড়ছ। চাচা ঘুমাচ্ছে। পরিদিন সকালে

চাচা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে চা বিস্কুট খাচ্ছে। আর মিথানকে ডাকছে । মিথান মিথান বলি এখন উঠ, ক’টা বাজে দেখেছিস, এই মিথান। মিথান বলল, চাচা প্রতিদিনই তো সময়মত উঠি।

তুমি শুধু শুধুই ডাকাডাকি কর কেন? চাচা উত্তরে ডাকাডাকি কি এমনি করি। সকালে ঘুম থেকে উঠা যে স্বাস্থ্যের জন্য কত ভাল তা তো তুই বুঝিস না। উঠে পড়। মিথান বিছানায় উঠে বসল। তারপর তার চাচাকে বলল ।

আচ্ছা চাচা তুমি না গতকাল বলেছিলে ঘটক ধরবে।

উত্তরে চাচা হ্যা। এই মাস শেষে বাড়িতে গিয়ে তোর মাকে বলব একটা ভাল

ঘটকের সাথে কথা বলতে মিথান – চাচা তুমি যে কি বল না মার সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে তোমার বাড়িতে যেতে হবে।

চাচা – আরে ছোকরা, তুই আর আমি তো যাবই যাব।

মিথান – ফোনেই তো বলতে পার।

চাচা- বলি, বাড়িতে গিয়েই বলি। আচ্ছা তোর এত তাড়াহুড়া কেন বলত?

মিথান- তুমি চাচা কিছুই বোঝ না। তোমার বিয়েটা শেষ হলে তারপর

আমারটা। চাচা – ও শ্যূায়ারের বাচ্চা দাঁড়া তোকে বিয়েটা করছি। বলে চাচা মিথানের বিছানায় দৌড়ে গেল।

১৩

মিথান হেসে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে চলে গেল তার মোবাইল ফোনটা নিয়ে। চাচা হাসতে লাগল। মিথান বাথরুমে গিয়ে কুড়ির নাম্বার ডায়েল। করল। ঢুকছে না। কুড়ির নাম্বার বন্ধ। মিথান মনে মনে ভাবছে নাম্বারটা বন্ধ। কেন? কিছুক্ষণ পরে মিথান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাস করতে লাগল। তারপর গোসল সেরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিথান আর তার চাচা অফিসে গেল।

তারপর বিকাল পাঁচটা

মিথান কুড়ির নাম্বার ডায়েল করে ও পাচ্ছে না। সে বিচলিত হয়েছে। সে রাতে ডায়েল করেও পায় নি। পরদিন সকালে মিথান ডায়েল করে দেখল যে কুড়ির নাম্বারটা খোলা। সে তখনি চাচাকে বলল চাচা আমি একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি। চাচা উত্তরে বলল, যা তাড়াতাড়ি আসিস অফিসে যেতে হবে। মিথান আচ্ছা বলে দৌড়ে ছাদে গিয়ে কুড়িকে ফোন দিল কুড়ি রিসিভ করল ।

হ্যালো আসসালামু আলাইকুম মিথান – অলাইকুম সালাম। কি খবর আপনার ফোন বন্ধ কেন? আর ও কোন

নাম্বার আছে না কি?

কুড়ি – আসলে মোবাইলে চার্জ ছিল না। –

মিথান- কি করছেন?

কুড়ি- পড়তে বসেছি। অফিসে যাবেন না?

মিথান – যাব মাত্র তো সাতটা বাজে ।

মিথান- বিরক্ত করলাম। কুড়ি- না কি বলবেন বলুন?

মিথান- আপনি কিছু বলবেন না?

কুড়ি- আপনারই তো বলার কথা। মিথান – আচ্ছা, সরাসরি বলছি। আপনার পছন্দের কোন ব্যক্তি আছে?

কুড়ি- না আপনার আছে। মিথান

হে তিনি আমার মা। আচ্ছা আজকাল কার কলেজ পড়া মেয়েদের পছন্দের মানুষ থাকে আর আপনার নেই কেন?

কুড়ি- আমাকে কে পছন্দ করেবে। সারাদিন এ গাছ থেকে ও গাছে ঘুরে বেড়াই বাবা মার ফসল চুরি করি। আচ্ছা আপনার তো পছন্দের মানুষ বেশ কয়েকটা

থাকার কথা, নেই বললেন?

মিথান – হা, হা। কলেজে যাবেন না? 1

কুড়ি – হে ।

মিথান – আপনি কোন কলেজে পড়েন?

কুড়ি- আরিচাঘাট মহিলা ডিগ্রী কলেজ। শুনেন মা শুনলে বকা দিবে। আপনি

রেখে দিন।

মিথান- আচ্ছা রাতে ফোন দিব কিন্তু।

কুড়ি- কেন, রাতে ফোন দিবেন কেন? মিথান – সেটা রাতেই বলব। রাখছি বাই

কুড়ি- বাই ।

মিথান তারপর রুমে গিয়ে গোসল, খাওয়া দাওয়া সেরে চাচাকে নিয়ে অফিসে চলে যায়। রাত সারে এগারটা

চাচা ঘুমিয়ে তখন স্বর্গবাসী । মিথান ফোনটা নিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে গিয়ে কুড়িকে ফোন দেয়। কয়েকবার দেওয়ার পর কুড়ি রিসিভ করে। আবার মিথানের পছন্দের মানুষ না থাকার কারণ জানতে চায়। মিথান মুচকি হেসে আসলে আমি মনের মত কোন মেয়ে এখনো পাইনি।

কুড়ি- কেমন মেয়ে চান আপনি?

মিথান – একটু চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে যে চালচলনে থাকবে চঞ্চল কিন্তু মার্জিত। সব বিষয়ে সে চঞ্চল থাকলেও Sexually চঞ্চল থাকবে না।

কুড়ি – আপনি খুঁজতে থাকেন, পাবেন। – মিথান – আপনার পরিবারে কে কে আছে?

কুড়ি – আমার বাবা মা আর এক ভাই । আপনার? –

মিথান – মা, দুই বোন, এক বোন বিবাহিত। আর একজন এইচ.এস.সি দিবে – ও শুনেন আগামী পরশু আমি আর আমার চাচা আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাব। সেখান থেকে আপনাকে ফোন দিব। আপনি অবশ্যই রিসিভ করবেন।

কুড়ি – ঠিক আছে । –

মিথান – আর হে আপনি আপনার ফোন চার্জ দিয়ে রাখবেন।

কুড়ি – আচ্ছা।

মিথান – রাখি তাহলে?

কুড়ি – আচ্ছা।

মিথান – বাই, Good night

কুড়ি – বাই, Good night মিথান কুড়ির সাথে বিকালে ও রাতে কথা বলে। এদিকে মিথান ও তার চাচা তাদের গ্রামের বাড়িতে যায়। গিয়ে তারা একসাথে খেয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নেয়। মিথান গ্রামের হাটে যায় বাজার করতে। এই সুযোগে চাচা মিথানের মাকে বলে তার বিয়ের কথা। মিথানের মা তো ভীষণ খুশি তার দেবর এত দিনে বিয়ে রবে ঠিক করছে। তাই তিনি সেদিনেই পাশের বাড়ির ঘটক চাচাকে খবর

দিয়েছে। মিথানের মা ও চাচা ঘটকের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেছে। মিখানের চাচা ঘটককে বলেছে চাচা আমি কিন্তু এক টাকাও যৌতুক নেব না। আমি শুধু একটা ভাল বউ চাই। ঘটক চাচা বলে, আচ্ছা আচ্ছা আমি আজই পাশের গেরামের জমির আলীর কাছে যাব। তার কলেজ পড়া একটা ভাল মেয়ে আছে। তোমরা কোন চিন্তা কইরো না। বলে ঘটক চাচা চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর মিথান হাট থেকে বাজার নিয়ে আসে। বাজার পাকঘরে রেখে মিখান তার মায়ের কাছে বসে। মিথানের মা তো খুশিতে আত্মহারা । মিথানের মা মিথানের চাচাকে উদ্দেশ্য করে বলল, মিন্টুর বিয়ের কাজটা শেষ হলেই আমার বাবার বিয়ে। লাল টুকটুকে একটা বউ আমি নিজে পছন্দ করে আনমু। যাতে আমার ঘরে আলো না থাকলেও আলো জ্বলে। মিথানের মা মিথানের দুই গালে দুই হাত রেখে মিথানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, বাবারে আমার একটাই স্বাদ আর কোন স্বাদ নাই। পিছন থেকে মিথানের বোন মিশি বলে, মা আমারও একটা সুন্দরী ভাবি পাওয়ার খুব স্বাদ। মিথান তার মায়ের দু’হাত ধরে বলে। মা আগে চাচার বিয়েটা শেষ হোক তারপর না হয় তুমি আমার জন্য মেয়ে দেখো। মিথান মিশির চুলে টান দিয়ে বলল, এই তোর পড়াশুনা নাই বড়দের কথা শুনছিস? ছেড়ে দিয়ে ভাইয়া ছাড়, লাগছে তো। এখন পড়তে বস গিয়ে, মিশি আচ্ছা বলে তার পড়ার ঘরে গেল।

পরদিন সকালে ঘটক চাচা এসে মিথানের মা আর চাচাকে ডাকল। মিথানের মা বিয়ের খবর জানতে চাইল। ঘটক চাচা বলল, ছেলে যৌতুক চায় না শুইনা মেয়ের বাপে বিয়ে দিব না। কইয়া দিল। চাচা অবাক হয়ে বলল, কেন? ঘটক বলল, তুমি যে যৌতুক চাও না তা শুইনা। মেয়ের বাপে মনে করছে তোমার কোন কিছুর ত্রুটি আছে। আমি ভাল কইলেও বিশ্বাস করে নাই ।

এই কথা শুনে মিথানের মা ও চাচা দু’জনেই বাকশূন্য হয়ে পড়ে। ঘটক চাচা তারপরও বলে, মিন্টু মিয়া আমি তাইলে এক কাজ করি তুমি যৌতুক চাও না কি তা আগেই কওয়ার দরকার নেই। মেয়ে দেইখা তোমাদের পছন্দ অইলে আর তাদের তোমাদের পছন্দ অইলে যদি তারা কিছু দিতে চায় তা নিবা, সমস্যা কিডা? তারপর চাচা খানিকটা ম্লান হয়ে বলল, ঠিক আছে দেখেন।

আমি তো কাল চলে যাব। আপনি ভাবির সাথে কথা বইলেন। ভাবি পরে ফোনে আমাকে জানাবেন। ঘটক চাচা বললেন, আচ্ছা বাবা, আমি তাইলে এহন আহি।

বলে ঘোটক চাচা চলে গেল। এদিকে মিথান কুড়িকে ফোন দেয়। সে একটা কথা কুড়িকে বলার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েও বলতে পারে নি। শেষে লজ্জায় মরি মরি করেও সে কুড়িকে প্রেমের আফার দিয়েছিল। কুড়ি বলেছিল যে সে মিথানকে না দেখে কিছু বলতে পারবে না। উত্তরে মিথান বলেছিল, সে আর তার চাচা একসাথে থাকে। সেজন্য সময় সুযোগমত দেখা করতে হবে। কুড়ি যাতে তার প্রেম অফারে অমত না করে সেজন্য অনুরোধ করেছিল। তার অনুরোধে কুড়ি সম্মত কি না তা কিছুই বলে নি।

পরদিন মিথান ও চাচা ঢাকায় চলে আসে। সেখানে ও যথারীতি মিথান কুড়ির সাথে কথা বলতে থাকে।

এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেল । ঘোটক চাচার জন্য কোন ভাল মেয়ের সন্ধান করতে পারে নি। এদিকে মিথান কুড়ির কথার পরিমাণ বেড়েই চলছে। মিথান অত্যান্ত চালকি করে তার চাচার চোখ ফাঁকি দিয়ে কথা বলে। কুড়িও তার মা বাবার অজান্তে মিথানের সঙ্গে কথা বলে । মিথান কুড়ির সাথে দেখা করার আগ্রহ থাকলেও সে তার চাচার জন্য পারছে না। মিথান কুড়ির ঠিকানা, তার মায়ের নাম্বার খাতায় লিখে রেখেছে।

কুড়ির সাথে কথা বলতে বলতে তারা দু’জনই এক সময় একান্তই দু’জনের অবগত হয়ে যায়। একে অপরের আঁখি হয়ে যায়। আপনি থেকে হয় তুমি। কুড়ি তার বার মিথানের কাছে কুৎসিত জাহির করে নিজেকে ছোট মনে করে । মিথান সেজন্য রাগ করে বলে কুৎসিত থাকলেও তুমি আমার শুধু আমার । এ কথা শুনে কুড়ি হেঁসে বলে সিনেমার ডায়লগ তো ভালই পার।

এ কথা শুনে মিথান কুড়ির কাছে আর ফোন করবে না বলে ফোন কেটে দেয়। পরদিন কুড়ি মিথানকে ফোন দেয়। মিথানের অভিমান শেষ। মিথান সেদিন তার কথায় কুড়িকে তার বাসর ঘরে স্থান দেয় আরও কত কি? কুড়ি মিথানের কথায় প্রথমে আপত্তি করলেও আবেগ বসত পরবর্তীতে আপত্তি করেনি। বরং কুড়িও মিথানকে জায়গা দেয় তার মনের ছোট্ট খাচায় প্রথম তার প্রেমিক পুরুষ হিসেবে।

তাদের কথার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। কথায় কথায় তারা একে অপরকে বুঝার চেষ্টা থেকে বুঝতে শিখে। একদিন মিথান কুেিড়কে জীবন সঙ্গী করার প্রতিশ্রুতি দেয়। মিথান কুড়িকে ও প্রতিশ্রুতি করতে বলে। কিন্তু কুড়ি বলে এত সহজে প্রতিশ্রুতি দেওয়াটা ঠিক না। আমি তোমার জন্য সর্বস্ব চেষ্টা করব। মিথান এতে রাগ করে । কুড়ির মিথানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। অবশেষে কুড়িও মিথানকে জীবন সঙ্গি করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবে প্রায় এক মাস চলে গেল।

ঘটক চাচা মিথানের চাচার জন্য ভাল মেয়ে খুঁজতে খুঁজতে তার জুতো ক্ষয় করে ফেলেছেন। শেষে একটা পেয়েছেন। ইতিমধ্যে মেয়ে পক্ষ ছেলের বাড়ি-ঘর দেখেছে। তাদের পছন্দও হয়েছে। বাকি ছেলে দেখা। ছেলে দেখবে কিভাবে তাও ঠিক হয়েছে। ছেলে যখন কয়েকজনকে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবে তখন মেয়ের পক্ষ ছেলেকে দেখবে।

তো তাহলে আমার আজকের পোস্ট আমি এখানেই শেষ করছি। আশা করছি গল্পটি আপনার ভালো লাগছে l যদি গল্পটা ভালো লাগে তাহলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন আমি এর পরবর্তী পার্ট দেয়ার চেষ্টা করব। সবাইকে ধন্যবাদ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

মানুষ মাত্রেই ভুল হয় , তাই পোষ্টে কোন ভুল থাকলে দয়া করে মাপ করে ‍দিয়েন, আর প্লিজ কমেন্টে লিখে ভুলগুলা শোধরানোর সুযোগ করে ‍দিয়েন।
কোন কিছু না বুঝলে বা কোন কিছু জানার থাকলে, আমাকে কমেন্টে জানান।
পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি লাইক দিবেন এবং কমেন্টে তা জানিয়ে দেবে যেন আমি আরো নতুন নতুন পোস্ট করার উৎসাহ পাই।

আর এরকম নিত্যনতুন আরো তথ্য জানতে এবং আমাদের সাথে যুক্ত থাকার জন্য আপনি আমাদের ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন হতে পারেন l group link—>

আর যেকোন প্রবলেমে ফেসবুকে আমি [—>profile link]
তাহলে সবাইকে ট্রিকবিডির সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রন জানিয়ে আজকে আমি আমার আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।


The post ভালোবাসার চড়াই উৎরাই- ১ম পর্ব appeared first on Trickbd.com.



from Trickbd.com https://ift.tt/1BvT4eN
via IFTTT
Share This Article :
Protiva

TAMBAHKAN KOMENTAR

3621301750812344269