BLANTERVIO103

নিয়ে নিন চমৎকার একটা ভৌতিক গল্প [শেষ অংশ]

নিয়ে নিন চমৎকার একটা ভৌতিক গল্প [শেষ অংশ]
Wednesday, June 29, 2022

Hello what’s up guys কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভালো আছেন । সবাইকে স্বাগতম আজকের একটি নতুন পোস্টে । টাইটেল আর thumbnail দেখে already বুঝে গেছেন আজকের টপিক কি । আশা করি পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখবেন । তো বেশি কথা না বলে আজকের পোষ্ট শুরু করা যাক তো যারা আগের পার্ট পরেননি তারা এই লিংক এ গিয়ে পরে আসুন ।
এবার আগের পার্ট এর পর ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এক মূহুর্ত দেরি না করে সঠান হাঁটতে লাগলাম।সিড়ি ভেঙ্গে নিচে
নামার সময়ও কেন যেন মনে হচ্ছিলো আঁড়ালে থেকে
কেউ আমার দিকে দৃষ্টি রাখছে।
সে চোখের দৃষ্টি বড্ড প্রখর।
দ্রুত নিচে নেমে জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।বাহিরে বের
হওয়ার পর পরই ঠান্ডা বাতাসে শরীরে অন্যরকম একটা প্রশান্তি
অনুভব হলো। মনে হচ্ছে এতক্ষণ পৃথিবী থেকে অনেক
দূরে একটা ভিন্নস্থানে চলে অবস্থান করছিলাম,যেখানে প্রাণ
খুলে শ্বাস নেওয়াটাই বড্ড কষ্টের। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বাগান
পেরিয়ে প্রাচীরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। এ বাড়িতে
কিছু তো একটা গন্ডগোল আছে।
তবে কি সেটা? আর সেটাই আমাকে খুঁজে বার করতে হবে।
প্রাচীরের কাছে এসে একটাবার দোতলার বেলকনির দিকে
তাকালাম,রোদের আলোতে বেলকনিটা চকচক করছে।
কেন যানি মনে হচ্ছে বাচ্চা মেয়েটা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে
আছে,আর ক্ষীণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
দেরি না করে প্রাচীর টপকিয়ে বাহিরে এসে সোজা বাড়ির
দিকে রওনা দিলাম।
বাড়ি এসেই টেবিলের উপর থাকা পানির জগটা উপরে ধরে ঢকাঢক
এক নিঃস্বাসে অর্ধেক শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
ধপাস করে সোফাতে বসে পড়লাম।
এতক্ষণে যেন শরীরে প্রাণের সঞ্চারণ হলো।
নীলা এসে কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠে
বললাম,”কে,কে?”
নীলা সামনে এসে চোখ উল্টিয়ে বললো,”ভূত। না ভূত
নয়,শাকচুন্নি।”
আমি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম,”ওহ তুমি। “
“কেন অন্যকাউকে আশা করেছিলে নাকি?”
“হুম,হলে মন্দ হতো না।”
“কিহ্। কি বললা তুমি?”
“আরে বাদ দাও,
অন্যকাউকে আসা করবো কেন,আর যে মেয়ে সামান্য
কোলবালিশকে তাঁর স্বামীর ভাগ দিতে চায় না,সে একটা
মেয়েকে।
যায় হোক আবরার কোথায়?ওকে দেখছি না যে?”
“রুমে খেলছে। তুমি সকাল সকাল কোথায় বেরিয়েছিলে,গাড়ি
টাও তো রেখে গেছিলে?”
“একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম।”
“সকাল নয়টার পর?”
“আরে না,কাছেই একটু দরকার ছিলো সেইজন্য। চলো
খেতে দিবা খুব জোর ক্ষুধা লেগেছে।”
“হুম আসো।”
কথাটা বলেই নীলা রান্নাঘরে চলে গেলো।
আমি সোফাতে বসে বসে একমনে ঐ বাড়িতে ঘটে যাওয়া
ঘটনাগুলো আওড়াচ্ছি।
‘এ কিভাবে সম্ভব, একটা মেয়ে আজ দশ বারো বছর পরও একই
রকম কিভাবে থাকতে পারে? আর গতকাল যদি আমি ভুল দেখেও
থাকি তাহলে ঐ মেয়েটাকেই কেন দেখলাম! বাকিদের
চোখে তাহলে কেন পড়লো না?
তাহলে কি মেয়েটার বয়সটা ঐ পাঁচ-ছয় বছরেই আটকে
রয়েছে? আবার গতরাতে দিব্যি সবকিছু মনে হলো নিজের
চোখের সামনেই ঘটে গেলো,অথচ সকালে উঠে নীলার
মুখে যা শুনলাম,তাঁর সাথে সেই সবের কোনোকিছুই ঘটেনি।
তাহলে কি আমি ইদানিং একটু বেশিই কল্পনাপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি?
মাথাতে ঢুকছে না। এসব কি হচ্ছে আমার সাথে?
“খেতে আসো।”
নীলার কথাতে সম্মতি ফিরলো আমার।সোফা থেকে উঠে
চোখ-মুখে পানি ছিটিয়ে খেতে খেতে বসলাম।
খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে রান্না ঘরের এক পাশে হঠাৎ করে
দেখলাম ঐ বাড়ির ফ্রেমে দেখা সেই মহিলাটি দেওয়ালের
সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড় অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার
দিকে তাকিয়ে আছে সে। যেন কিছু একটা বলতে চায়ছে
আমাকে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠে বললাম,”কে তুমি? তুমি ঐ বাড়ির
মহিলাটা না! এইখানে কি করছো?”
নীলা আমার চেচামেচি শুনে সেদিকে তাকালো,তারপর
বললো,”কোন মহিলা,আরে ওটা তো আমাদের সারদা মাসি।
গতকাল রাতেই চলে এসেছে গ্রাম থেকে।”
আমি নিজেকে শান্ত আবারো তাকালাম সেদিকে।
হ্যা নীলা তো ঠিকি বলছে,সারদা মাসি দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ এমন
প্রশ্ন করাতে সে বেশ ইতস্তত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বললাম,”তুমি যে বললা,মাসির আসতে আরো কয়দিন সময় লাগবে?”
নীলা বললো,”হ্যা বলেছিলাম,তখন মাসি বলেছিলো দেখেই
তো বলেছিলাম। আজকে দেখি সকালে চলে এসেছে।
জিজ্ঞাসা করাতে বললো,তাঁর ছেলে নাকি এখন অনেকটাই সুস্থ্য
তাই চলে এসেছে।”
“কিন্তু আমি সকালে যখন রান্নাঘরে গেলাম তখন তো মাসিকে
দেখলাম না,তাই হঠাৎ দেখে ভেবেছি অন্যকেউ।”
“তখনো ছিলো,মাসিকে একটু বাজারে পাঠিয়েছিলাম,সবজি কেনার
জন্য।”
“ওহ্ আচ্ছ ঠিক আছে।”
আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলাম।
খাবার শেষে টেবিল ছেড়ে উঠার সময় আরো একবার মাসির
দিকে তাকাতেই দেখলাম,মাসি বড় অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে অপলকভাবে।
তাঁর দিকে চোখ পড়তেই মুখ বাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি
খেলে গেলো তার ঠোঁটে।
এসবকিছুই ভ্রম,নিজেকে কোনরকমে বুঝিয়ে টেবিল ছেড়ে
উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালাম।
বাহিরে রোদ ঝলমল করছে।
আবরার তাঁর নতুন বন্ধুদের নিয়ে বল খেলছে। প্রাণ খুলে
হাসছে ছেলেটা।
ছেলের হাসি দেখে আমার মুখেও সামান্য হাসি খেলে
গেলো।
চারপাশ দেখতে দেখতে আবার চোখ পড়লো রাস্তার ওপাশে
থাকা বাড়িটার বেলকনির দিকে।
রোদ পড়ে চকচক করছে বেলকনিটা। নিজের অজান্তেই
বলে উঠলাম,”আসলেই কি ভূত বলে কিছু আছে? আমার সাথে
গত কয়েকদিনে যা হয়ে এসেছে সেসবের কোনো
বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আমার জানা নেই।
কাউকে এসব বললে,সে নিশ্চয় আমাকে পাগল বলে আখ্যায়িত
করবে নয়তো বলবে সবকিছুই আমার কল্পনা।
কারণ কিছুদিন আগে আমি নিজেও এইসবে কখনো বিশ্বাস করিনি।
মানুষ কি মারা যাওয়ার পর আর ফিরে আসতে পারে?
কখনোই ফিরে আসেনা। তাহলে আমার সাথে যেগুলো
হচ্ছে তার ব্যাখা কে দিবে?
“তুমি এখানে? আর আমি সারাবাড়ি খুঁজছি।”
নীলার কথাতে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললাম,”কেন কিছু বলবা?”
“নাহ্ তেমন কিছু না। আচ্ছা আমাকে সত্যি করে বলো তো,তুমি
কি আমার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাচ্ছো?”
“তোমার কেন এমনটা মনে হলো?”
“নাহ্,এমনিতেই। কয়দিন ধরে তোমার ব্যবহারের বেশ পরিবর্তন
দেখছি তো তাই। কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা হলে আমার সাথে
সেয়ার করতে পারো। সেদিন বললে, আবরারের সাথে কাকে
না কি দেখেছো,আবার বললা আমি নাকি এ বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার
কথা বলেছি তোমাকে,একটু আগে আবার মাসিকে দেখে
চিৎকার দিয়ে উঠলে। তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত।অফিসে
কোনো ঝামেলা হয়েছে কী?”
আমার কাছে বলতে পারো,আর তুমি তখন মাসিকে অন্য একজন
মহিলা বলছিলে,কোন মহিলার কথা বলছিলে?
আমি হেসে বললাম,”আরে নাহ্। তেমন কিছু না। গুরুতর কিছু হলে
তো সবার আগে তোমাকেই বলতাম। ওসব বাদ দাও।”
নীলা খানিকটা হতাশ মনে বললো,”কি জানি। আচ্ছা বাদ দিলাম।
আচ্ছা চলো না আজকে কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসি।
তোমার তো আজকে অফিস ছুটি। শুনেছি এইখানে পাশেই
একটা সুন্দর লেক আছে। চলো না সেখান থেকে একটু ঘুরে
আসি। তাহলে দেখবা মনটা অনেকটা হাল্কা হয়ে গিয়েছে।”
আমিও আর না করলাম না,আসলেই এসবের থেকে কিছুটা দূরে
থাকার জন্য হলেও একটু ঘুরাঘুরির প্রয়োজন আছে। না হলে
আজগুবি চিন্তাভাবনা আরো বেশি করে পাকড়ে ধরবে আমাকে।
বললাম,”আচ্ছা ঠিক আছে,তাহলে বিকেলে রেডি হয়ে
থেকো।”
নীলা হেসে জবাব দিলো,”আচ্ছা ঠিক আছে। এখানে দাঁড়িয়ে
কি করছো চলো রুমে চলো।সপ্তাহে তো একটা দিন বাসায়
থাকো আমাকে একটু সময় দিবা তা না,সকাল থেকে পালিয়ে
পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উনি।”
কথাটা বলেই হেচকা টানে বেলকনি থেকে সরিয়ে নিলো
আমাকে।
বিকেলে আমরা তিনজন মিলে লেকে ঘুরতে গেলাম। আবরার
তো মহাখুশি। সারাবিকেল খুনসুটিতে কেটে গেলো
আমাদের। রাতে বাহিরে ডিনার করে একবারে বাসায় ফিরলাম।
তিনজনেই বড্ড ক্লান্ত,আবরার তো গাড়ির ভিতরেই ঘুমিয়ে
পড়েছে। বাসায় এসে আবরারকে কোলে নিয়ে রুমে এসে
শুইয়ে দিলাম।
নীলা বললো,”তুমি আর কিছু খাবে? মাসি খাবার গুলো ফ্রিজে
ঠিকঠাক মত রেখেছে কিনা দেখে আসি।”
আমি মোড়ামুড়ি করতে করতে বললাম,”না,আমি আর কিছু খাবো না।
বড্ড ক্লান্ত লাগছে,আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
তুমিও তাড়াতাড়ি এসে রুমের লাইট টা অফ করে দিয়ে শুয়ে
পড়ো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
ঘুমের ভিতরে হঠাৎ একটা শব্দ শুনে জেগে উঠলাম।
তাকিয়ে দেখি নীলা ড্রইং রুমে হাঁটাহাটি করছে। বিছানা ছেড়ে
উঠে বসলাম।
‘এতো রাতে নীলা না ঘুমিয়ে হাঁটাহাটি করছে কেন?
কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর দেখলাম, সদর
দরজা খুলে বাহিরে দিকে সঠান হেঁটে চলে যাচ্ছে নীলা।
জানবার ইচ্ছে আমাকে ভাবিয়ে তুললো,
আমি খাট থেকে নেমে বেশ কয়েকবার নীলাকে ডাক
দিলাম,কিন্তু কেন যানি মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বার হলো না
আমার।
‘এতো রাতে নীলা বাহিরে কোথায় যাচ্ছে?
খাট থেকে নেমে নীলাকে উদ্দ্যেশ্য করে তাঁর পিছু নিয়ে
হাঁটা শুরু করে দিলাম।
নীলা সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার ওপাশে থাকা বাড়িটার
কাছে গিয়ে গেইটের সামনে থমকে দাঁড়ালো।
আমি আরো কয়েকবার তাকে ডাকার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মুখ
দিয়ে কোনো শব্দ বার হলো না।
বেশ খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়লাম, দেখলাম দিনের
আলোতে তালা বন্ধ হয়ে থাকা গেইট টা আপনা-আপনি খুলে দু
পাশে ভাগ হয়ে গেলো।
নীলা সন্তপর্ণে ভিতরে ঢুকে গেলো।
আমিও তাঁর পিছু নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।
নীলা ধির গতিতে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই
দেখলাম সেটাও নিজ থেকে খুলে গেলো। নীলা যেন
এখন নীলার ভিতরে আর নেই। তার সাথে হাজারো অদৃশ্য শক্তি
তাকে ঘিরে ধরে আছে। কিন্তু নীলা ভিতরে ঢুকছে কেন?
আর ও এই বাড়িতে এমনভাবে ঢুকছে যেন তাঁর নিত্যদিন যাতায়াত এই
বাড়িটাতে।
কিন্তু বাড়িটা তো সুবিধার নয়, বাড়িটা তো অভিশপ্ত।
নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না।
ছুটে গিয়ে পিছন থেকে নীলার হাতটা ধরতেই অনুভব
করলাম,নীলার হাতটা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে আছে।
হাতটা ধরতেই নীলা ঘুরে তাকালো, মূহুর্তেই শরীরে বিদ্যুৎ
খেলে গেলো, শক খাওয়ার মত ঝাটকা লাগলো আমার।
গতরাতে নীলার বলা ভয়ংকর সেই বিবরণের সাথে এখন এই
মেয়েটার হুবুহু মিলে যাচ্ছে। পুরো শরীর ফ্যাকাশে,যেন
কেউ শরীরের সমস্ত রক্ত শুষে নিয়ে শুধু শরীরটাকে
ছেড়ে দিয়েছে। চোখের ভিতরের মনি দুটো কেউ যেন
খুবলে নিয়ে কালোর পরিবর্তে সাদা চুন লাগিয়ে দিয়েছে।
এটাতো নীলা না!! তাহলে নীলা কোথায়?
এবার মুখ দিয়ে কথা বেরিয়ে এলো আমার,কাপাকাপা কণ্ঠে
বললাম,”কে কে তুমি?”
মেয়েটা হা হা করে হাসতে লাগলো। সে হাসির শব্দ যেন
কানের পর্দা ভেদ করে সোজা হৃৎপিন্ডতে গিয়ে আঘাত
করছে আমার।
আমি স্বজোরে হাতটা টান মেরে ছাড়িয়ে নিতে চায়লে মনে
হলো হাতটা আমার হলেও সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে
অন্যকেউ।
সাতপাঁচ কোনোকিছু ভাবার আগেই মেয়েটা আমাকে টেনে
নিয়ে যেতে লাগলো ভিতরের দিকে। আমি যতবারই টান দিয়ে
হাতটাকে ছাড়িয়ে নিতে চায়ছি ততোই যেন হাতটা আরো বেশি
করে আটকে যাচ্ছে তাঁর হাতের সাথে।
জোরে চিৎকার দিতে গিয়েও কেন যানি মুখ দিয়ে কোনো
শব্দ বার হচ্ছে না আমার।
কেউ যেন আমার বাকশক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে।
প্রাণপণে মেয়েটার থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য ছটফট
করতে থাকা আমাকে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গিয়ে সিড়ি
বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো মেয়েটা।
আমার হাত-পা, পুরো শরীরের পেশীগুলো যেন কাজ করা
বন্ধ করে দিচ্ছে ধিরে ধিরে।
মেয়েটা ঠিক সেই রুমটাতেই আমাকে নিয়ে গেলো যেই
রুমটাতে দিনের বেলাতে আমি এসেছিলাম।
রুমে আসার পর দিনের বেলাতে দেখা সেই ওয়ারড্রবের
কাছে এনে হাতটা ছেড়ে দিলো আমার।
আমি হাত মুক্ত দেখে উঠে পালানোর চেষ্টা করলেও
পালাতে ব্যর্থ হলাম।
মেয়েটা এবার দু হাত দিয়ে স্বজোরে হাতল ধরে ওয়ারড্রবের
পাল্লা দুটো টান দিতেই পঁচা গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসলো
আমার।
ওয়ারড্রবের ভিতরে দুজন মানুষের লাশ পড়ে আছে।লাশ দুটো
পঁচে গলে একটা আরেকটা সাথে লেপ্টে গিয়েছে।
হাজারো মাংসাশী পোকা যেন লাশ দুটোর পুরো শরীরে
ছড়িয়ে থেকে মাংসগুলো পরম তৃপ্তির সহিত খাচ্ছে।
এমন বিভৎসতা দেখে যেন আমার চোখ দুটি খুবলে গিয়ে
খসে পড়ে যেতে চায়ছে এখনি।কি হচ্ছে এসব? বিভৎসতা যে
আর কোনভাবেই চোখদুটি সহ্য করতে পারছে না আমার।
আমাকে দেখে লাশের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাংসাশী
পোকাগুলো এবার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো পঁচা
লাশদুটোকে ছেড়ে।
আমি প্রাণপণে চিৎকার দিতে গিয়েও কেন যানি মুখ দিয়ে
কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।
তাহলে কি আমারো একই অবস্থা হবে? এই লাশদুটোর মত
করে কি আমার পুরো শরীরটাকেও এই মাংসাশী পোকা গুলো
পরম তৃপ্তির সহিত খুবলে খুবলে খেয়ে শরীর থেকে
মাংসগুলো আলাদা করে দিবে?
ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে,একটা পোকা এসে হাতে কামড়
দিতেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম। কেউ যেন শতশত সুই হাতের
ভিতরে একত্রে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ব্যাথাতে কাতরাচ্ছি আমি।তবুও যেন কেউ আমার আর্তনাদ শুনতে
পাচ্ছে না।
বিশাল এই পৃথিবীর বুকে যেন নিজেকে এইমূহুর্তে খুব তুচ্ছ
মনে হচ্ছে,
নিজেকে এদের থেকে বাঁচাতে না পেরে।
শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে এবার শেষবারের মত আর্তনাদ
করে উঠলাম নিজেকে বাঁচানোর জন্য।

“এই কি হয়ছে ওমন করছো কেন? এই আশিক,আশিক। কি হয়ছে
তোমার?”
নীলার ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভাঙ্গলো। চোখ মেলে তাকিয়ে
যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। তারমানে এতক্ষণ দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।
দুঃস্বপ্ন এতোটা বিভৎস আর ভয়ংকর হয় জানা ছিলো না।
“কি হয়ছে,ওমনভাবে গোঙ্গানি দিচ্ছিলে কেন? কোনো খারাপ
স্বপ্ন দেখেছো কী?”
আমি খানিক্ষন চুপ থেকে পাশের থাকা বোতলটা হাতে নিয়ে পানি
পান করার পর বললাম,”হুম,খুব ভয়ানক একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু
কি দেখেছি সেটা মনে নেই। শুধু মনে আছে তুমি আমাকে
টেনে হিচড়ে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছিলে।”
নীলা চোখ দুটি গোলগোল করে বললো,”আমি! আমি
তোমাকে টানছিলাম। যাক স্বপ্নের ভিতরেও তো তোমাকে
টানার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।”
“তুমি চায়লে বাস্তবেও ঠ্যাং ধরে টানতে পারো,কি টানবা নাকি?”
“আরে ধুর কি বলো, এ শেষরাতে এখন আমার কাজ নেই
তোমাকে ধরে টানাটানি করতে যাবো আমি। ঘুমাও তো,একটু
পরেই আবার ভোর হয়ে যাবে।”
নীলা আমার কাছ থেকে উঠে গিয়ে ওপাশে আবার শুয়ে
পড়লো।আমি চুপচাপ ঘুমানোর ভান ধরে পড়ে থাকলাম বিছানার
উপরে।
‘হঠাৎ এমন স্বপ্ন দেখার কারণ কী? ওরা দু’জনে চায়ছে টা কি
আমার কাছে? ঐ বাড়ির মালিক সম্পর্কে আমাকে জানতে হবে।
নিশ্চয় এমন কোনো দূর্ঘটনা লুকিয়ে আছে লোকচক্ষুর
আড়ালে যা কেউ জানে না।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ভোরের আযান পড়লো। বিছানা ছেড়ে
উঠে ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুম আসলো না। মাথার ভিতরে
দুঃস্বপ্নটা চক্রাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সকালে অফিসে যাওয়ার পথে আবরারকে তার স্কুলে নামিয়ে
দিয়ে আমি পিছনে মোড় নিলাম। সামনের মোড়ে আমাদের
বাড়ির মালিকের বাসা,ওর সাথে কথা বলে যদি কোনো কিছু জানা
যায়,সেই উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলাম।
বাড়ির সামনে যেতেই দেখলাম,বাড়ির মালিক বারান্দাতে বসে বসে
খবরের কাগজ পড়ছে আর চা খাচ্ছে।
আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে পত্রিকা থেকে মুখে
তুলে তাকালেন ভদ্রলোক।
তারপর বললেন,”আরে আশিক সকাল সকাল কি মনে করে?
আসো আসো।
তারপর একজন মহিলার নাম ধরে ডেকে বললেন,চা দিতে।
আমি ভদ্রলোককে চা দিতে বারণ করে একটা চেয়ার টেনে
নিয়ে বসলাম।
ভদ্রলোক হেসে বললেন,”তারপর নতুন বাড়িতে কেমন
লাগছে,বাড়িওয়ালা হিসেবে তো আর তোমাদের কোনো
খোঁজই নিতে পারলাম না। একা মানুষ তারউপরে আবার হাঁটুর ব্যাথাটা
বেড়েছে নয়তো সময় করে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে
আসতাম তোমাদের।”
আমিও হেসে জবাব দিলাম,”না তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
এতো কম টাকা দিয়ে এতবড় একটা বাড়ি পেয়েছি,আর তাছাড়াও
আমার স্ত্রী আর ছেলেরও বাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছে।”
বাড়িওয়ালা কথাটা শুনে বেশ প্রফুল্ল মনে বললেন,”তা বেশ
বেশ। তা বাবা কোনো দরকার ছিলো নাকি?”
আমি ইতস্ততভাবে বললাম, “হ্যা চাচা। আপনার কাছে কিছু জানার
ছিলো।”
“হ্যা বলো,কি জানতে চাও?”
“আসলে আমাদের অপজিটে যে ডুপ্লেক্স বাড়িটা আছে।
সেই বাড়িটার সম্পর্কেই কিছু জানার ছিলো?”
কথাটা শোনার পর দেখলাম বাড়িওয়ালার কপালে খানিকটা ভাজ পড়ে
গিয়েছে।
বাড়িওয়ালা অনিচ্ছুক হয়ে বললেন,”তুমি কি ঐ পরিত্যক্ত বাড়িটার কথা
বলছো?”
“হ্যা।”
“কি জানতে চাও বলো?”
“না তেমন কিছু না,আসলে এখানে আসার পর থেকে
লোকমুখে নানান কথা শুনতে পাচ্ছি তো তাই।”
“কি কথা,ঐ বাড়িতে ভূত থাকে,বাড়িটা অভিশপ্ত এইসব তাই তো?”
“হ্যা। আপনি ঠিকি ধরেছেন। সেদিন আমার গাড়ির ড্রাইভারও একই কথা
বলছিলো।”
“তা তোমার কি মনে হচ্ছে,তুমি তো বাড়িটার একদম কাছেই
থাকো। রাস্তার এপার-ওপার। তোমার চোখে কি ওসব কিছু
পড়েছে?”
“নাহ্ তেমন কিছু পড়েনি। আচ্ছা ঐ বাড়িটাতে কারা থাকতো,আর এখন
থাকেনা কেন?”
বাড়িওয়ালা এবার পত্রিকার কাগজটা একপাশে সরিয়ে রেখে
বললো,” ঐ বাড়ির মালিক আসলে এখানকার না। লন্ডনে থাকতো
তাঁরা সহপরিবারে। নাম জাফর চৌধুরী।
মাঝেমধ্যে কাজের ব্যস্ততা কাটাতেই ঐ বিলাসবহুল বাড়িটা
বানিয়েছিলো বাড়ির মালিক।
দেশে আসলে যে কয়টাদিন থাকতো ঐ বাড়িতেই থাকতো।
তারপর আবার চলে যেতো,তবে ঐ বাড়ির দায়িত্ব দেওয়া
হয়েছিলো ঐ বাড়ির কেয়ারটেকার সুমনকে।বেশ বিশ্বস্ত
লোক ছিলো। তবে বিশ্বস্থ থাকলে কি, কথায় আছেনা সবকিছুর
নষ্টের মূলে নারী। ওদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই জিনিস
ঘটেছিলো।
কেয়ারটেকারের নাম ছিলো সুমন,দেখতে বেশ সুঠাম আর
শ্যামবর্ণের হলেও চেহারাতে একধরনের মায়া ছিলো।
হয়তো সেই মায়াতে আচ্ছন্য হয়ে পড়েছিলো বাড়ির
মালকীন।আর এভাবে আসা যাওয়ার এক পর্যায়ে নাকি বাড়ির
মালকীনের সাথে সুমনের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো
বলে শোনা যায়।
“তারপর?”
“তারপর আর কি ঐ বাড়ির মালকীন তাঁদের পাঁচ বছরের মেয়েকে
নিয়ে নাকি সুমনের হাত ধরে পালিয়ে যায়।”
“বাড়ির মালিক তাঁদের খোঁজার চেষ্টা করেনি?”
“তা আবার করেনি,করেছিলো। এখানকার স্থানীয় থানাতে
বলেছিলো,পুলশি কিছুদিন খোঁজার পর বিষয়টা ধিরে ধিরে চাপা
পড়ে গিয়েছিলো।তারপর ভদ্রলোক একাই আবার লন্ডনে
ফিরে গিয়েছিলো। আর কখনো এবাড়িতে আসেন নি। তারপর
থেকেই এই বাড়িটা পরিত্যক্ত হিসাবেই পরিচিত সবার কাছে। এলাকার
মানুষে নানান ধরনের কথা তুলেছে বাড়িটাকে নিয়ে।
তবে আমি কখনো ওসব বুঝতে পারিনি,এমনকি কখনো
দৃষ্টিগোচরও হয়নি আমার।
বুঝতেই তো পারছো,সাধারণ মানুষ তিলকে তাল বানাতে এদের
কোনো জুড়ি নেই।”
বাড়িওয়ালার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। বাড়িওয়ালার কথামত যদি
ঐ বাড়ির মালকীন কেয়ারটেকারের সাথে অন্যত্র চলে
যায়,তাহলে আমাদের সাথে যেগুলো হচ্ছে তার ব্যাখা কে
দিবে? আদৈও কি ঐ বাড়ির মালকীন চলে গিয়েছিলো, নাকি ঘটনার
আঁড়ালেও অন্য কোনো ঘটনা লুকিয়ে আছে,যা সবার অজানা?
অফিসের ডেস্কে বসে আছি এমন সময় একজন ভারী
কণ্ঠজড়িত লোক এসে বললো,”স্যার ভালা আছেন?”
একটা জরুরি ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলাম,তাই সেদিকে না তাকিয়েই
বললাম,”এখন চা খাবো না। পরে ইচ্ছে করলে ডেকে নিবো।”
সামনে থাকা লোকটা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ডেস্কের উপর
একটা সাদা কাগজ রেখে চলে গেলো।
আমি ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই
দেখলাম,আমাদের অফিসের চা বয় করিম চাচা দূরে দাঁড়িয়ে
আছে।
কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম তাতে একটা ফোন নাম্বার লিখা
রয়েছে।
চা বয় চাচাকে ডাক দিলাম।
“করিম চাচা একটু এদিকে আসো তো।”
করিম চাচা সন্তপর্ণে ছুটে এসে বললো,”হ স্যার কিছু কইবেন,চা
লাগবো নি?”
আমি হেসে বললাম,”না চাচা,এইটা কিসের কাগজ দিয়ে গেলে
আমাকে? কার ফোন নাম্বার এইটা?”
করিম চাচা খানিকটা অবাক হয়ে বললো,”স্যার আমি তো আপনারে
কিছু দেয় নাই।”
“একটু আগেই না আমার ডেস্কের সামনে এসে কাগজটা দিয়ে
গেলে আমাকে?”
“নাতো স্যার,আমি তো আমার জায়গাতেই দাঁড়াইয়া ছিলাম। আপনি
ডাকনের পর আইছি।”
“তুমি ছাড়া কি আর কোনো লোক এসেছিলো,বয়স্ক টাইপের?
বা আমার ডেস্কের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছো
কাউকে একটু আগে?”
“কোই নাতো,কাউরে তো দেখি নাই।”
দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে সেও জানালো,সে ওমন
কোনো লোককে ভিতরে আসতে দেখেনি।
কাগজটা হাতে নিয়ে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লাম।
একটু আগে তাহলে যে বয়স্ক লোকটা আমার ডেস্কের
সামনে এসেছিলো সে কে ছিলো?
আর কেউ যদি না আসে,তাহলে কাগজটা কে দিয়ে গেলো?”
কোনোকিছু না ভেবেই কাগজে থাকা নাম্বারটা মোবাইলে টাইপ
করে কল দিলাম। ল্যান্ড ফোনের নাম্বার।নাম্বারে রিং হচ্ছে। রিং
শেষ হওয়ার মূহুর্তে একজন ভারী কণ্ঠে বলে
উঠলো,”হ্যালো জাফর বলছি?”
আমি ফোনটা কানে নিয়ে কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে বসে
রয়লাম,ওপাশ থেকে একনাগাড়ে ভদ্রলোক হ্যালো হ্যালো
করেই চলেছে।
এই জাফর কি সকালে বাড়িওয়ালার বলা ঐ জাফর?
আমি বললাম,”হ্যালো। আমি কলাতলীর সাত নাম্বার রোডের
বারো নাম্বার বাসার ভাড়াটিয়া বলছিলাম।”
ফোনের ওপাশটা কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর
বললো,”কলাতলী,কোন কলাতলী?”
“কুসুমপুর কলাতলী,আপনি তো জাফর চৌধুরী তাই না?”
লোকটা এবারো কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললো,”ওহ
আচ্ছা,তা কে বলছেন আর কেন ফোন দিয়েছেন,নাম্বার
কোথায় পেয়েছেন আমার?”
“আসলে সেসব বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
আসলে আপনার কাছে যে জন্য ফোন দিয়েছি, আপনার
ফেলে রাখা ডুপ্লেক্স বাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আর আমি একজন কর্পোরেট অফিসার,আপনার বাড়ির সামনের বাড়ির
ভাড়াটিয়া।
আসলে আপনার বাড়িটা যেহেতু খালি পড়ে আছে,আমি চায়ছিলাম
আপনার বাড়িটা ভাড়া নিতে।”
লোকটা এবার বেশ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,”আপনি কি আমাকে
টাকার লোভ দেখাচ্ছেন,ঐ সামান্য কিছু ভাড়ার টাকা দিয়ে তো
আমার একদিনও চলবে না।”
আমি নিজেকে শান্ত রেখে বললাম,”তা জানি,তবে আপনার বাড়িটা
তো শুধু শুধু পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
এতো বিলাসবহুল বাড়িটা পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে দেখেই
আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম,আপনি যখন রাজি না তাহলে আর কি
করার।”
কথাটা বলে ফোন রেখে দিচ্ছিলাম,তখনি ওপাশ থেকে ভেসে
আসলো,”আপনার যখন বাড়িটা এতোই মনে ধরেছে,তাহলে
আপনি চায়লে বাড়িটা একবারে কিনে নিতে পারেন,পারবেন?”
ভদ্রলোককে সামনা-সামনি যেহেতু দেখার ইচ্ছে ছিলো,তাই
বললাম,”হ্যা পারবো। তারজন্য তো আপনাকে এখানে আসতে
হবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,আর তাছাড়া আমি এমনিতেও যেতাম। বাড়িটা বিক্রির
জন্য,কয়েকজন বিল্ডারের সাথেও এ বিষয়ে কথা বলে
রেখেছি। আপনার যেহেতু বাড়িটা এতোই পছন্দ
হয়েছে,তাহলে আপনার সাথে একটাবার বসা যেতেই পারে।
আমি কয়েকদিনের ভিতরে বাংলাদেশে যাচ্ছি। তখন কথা হবে।”
বলেই লোকটা লাইনটা কেটে দিলো।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে ভাবতে লাগলাম,এই
লোকটাকে যে আমি মনে খুঁজছি মনে খুঁজছি তা অন্যকেউ
জানলো কিভাবে?
আমি তো কাউকে বলিও নি,আর যেই লোকটা আমাকে কাগজটা
দিয়ে গেলো সেই বা কে ছিলো? ভদ্রলোক আসলেই
সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।
..

অন্তিম পর্ব)
দিনকে দিন কি আমি আরো বেশি করে অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছি? কি
হচ্ছে এসব আমার সাথে। যা আমি দেখি তা আর কেউ দেখতে
পাচ্ছে না কেন?
এসব ভাবতে ভাবতে আমার সামনের দেওয়ালে থাকা সি সি
ক্যামেরার দিকে চোখ পড়লো।
ক্যামেরাটা ঠিক আমার ডেস্কের অপরপ্রান্তে বসানো
রয়েছে। সুতরাং আমার ডেস্কের সামনে যে কেউই আসুক না
কেন সে ঐ ক্যামেরাতে ধরা পড়বে।
ছুটে গেলাম কন্ট্রোল রুমে,গিয়ে কন্ট্রোলারকে আমার
ডেস্কের সামনে থাকা সি সি ফুটেজটা দেখাতে বললাম।
দেখলাম মনিটরে একজন আপাদমস্তক কালো চাদরে
মোড়ানো লিকলিকে চেহারার আগুন্তকঃ ধির গতিতে আমার
ডেস্কের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আমাকে কিছু একটা
বলছে,হয়তো ‘ভালা আছেন স্যার’ এই কথাটায় বলছিলো। আমি
আমার ফাইলটার দিকে মাথা নিচু করে ব্যস্ত হয়ে আছি।
লোকটা এবার চাদরের ভিতর থেকে ডান হাতটা বার করে একটা
কাগজ রেখে দ্রুত গতিতে আবার চলে গেলো।
ফুটেজটা ফ্রিজ করার পরও লোকটার মুখটা ঠিকমত ঠাওরে উঠতে
পারলাম না।
কারণ পুরো মুখটা চাদর দিয়ে মোড়ানো।
তাহলে চা বয় করিম চাচা আর দারোয়ান যে বললো তারা কাউকে
আমার ডেস্কের সামনে আসতে দেখেনি,তাহলে এই
লোকটাকে ক্যামেরা কিভাবে ধারন করলো?
অফিসের অন্য স্টাফদের বললে হয়তো বিষয়টা আরো জটিল
হতে পারে,সেই ভয়ে ঘটনাটা চেপে গেলাম।
আজ পাঁচ-ছয়দিন পর খুব সকালে একটা অচেনা নাম্বার থেকে
সকালে ফোন আসলো,রিসিভ করতেই একজন পুরুষালী
কণ্ঠে বললো,”আমি বাংলাদেশে এসেছি।
কয়েকঘন্টার ভিতরে কুসুমপুর পৌঁছে যাবো।আপনি ফ্রি আছেন
তো?”
কথাগুলো শুনে বুঝতে বাকি রয়লো না,সামনের বাড়িটার মালিক,
জাফর চৌধুরী আসছেন তাহলে।
আমি একগাল হেসে জবাব দিলাম,”হ্যা একদম ফ্রি আছি। আপনি
সোজা এসে আমার বাসায় উঠবেন,একসাথে দুপুরের খাবার
খাবো।”
ওপাশ থেকে ভদ্রলোক হেসে লাইনটা কেটে দিলো।
আমি দ্রুত অফিসে ফোন দিয়ে পেট খারাপের কথা বলে ছুটি
নিয়ে নিলাম।
এদিকে নীলাকেও বললাম,দুঃসম্পর্কের এক কাজিন আসছে বাহির
থেকে, আমাদের বাসাতেই উঠবে সে।তাঁর জন্য যেন খাবার
রেডি করে রাখে।দুপুরে একসাথে খাবো।
নীলা আর মাসি রান্না করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,আর আমি
আবরারকে স্কুলে রেখে এসে অপেক্ষা করতে
লাগলাম,ভদ্রলোকের আশার পথ চেয়ে।
দুপুরের দিকে রাস্তার ওপাশে থাকা বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে
থামলো,বাসা থেকে বার হয়ে সেদিকে গেলাম।
গাড়ির ভিতর থেকে একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক নেমে
দাঁড়ালো। বাড়িটার দিকে তাঁর তাকানোর ভঙ্গিমা আর পোষাক
দেখে খুব একটা বেগ পেতে হলো না ভদ্রলোককে
চিনতে। ইনিই তাহলে এই বাড়ির মালিক,জাফর চৌধুরী। নামের সাথে
চেহারা আর পোষাক-পরিচ্ছেদের বেশ মিল আছে।
পরনে ছাঁয় রংয়ের একটা কোর্ট পরা ,চোখে হাল্কা ফ্রেমের
চশমা, মাথায় কাঁচাপাকা চুল সেই সাথে বাদামী রংয়ের সুঠাম দেহটাতে
একটা চৌধুরী চৌধুরী ভাব আছে।
আমাকে আসতে দেখেই ভদ্রলোক বলে উঠলো,”
আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম জাফর চৌধুরী। “
বলেই হ্যান্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলেন।
আমিও হাসি মুখে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,”আমি আশিক, আমার
সাথেই আপনার কথা হয়েছিলো।”
“ওহ্ আচ্ছা, আপনিই সেই ভদ্রলোক।”
“হ্যা, আমার বাড়ি রাস্তার ওপাশে,ঐযে ,ওখানে ফ্রেশ হয়ে
দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর না হয় এ বাড়িতে আবার আসা যাবে।
ভদ্রলোক গাড়িটা ছেড়ে দিয়ে আমার সাথে হাঁটতে লাগলো।
লোকটা তাঁর সাথে করে শুধু একটা হ্যান্ডব্যাগ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে
আসেনি।
হয়তো ঐ ব্যাগের ভিতরেই বাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র
আছে।
জাফর সাহেবকে একটা রুম দেখিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে
বললাম।
নীলা আর মাসি খুব যত্ন করে তৈরী করা স্বাধের খাবারগুলো এক
এক করে টেবিলে এনে সাজিয়ে রেখে আবার ভিতরে চলে
গেলো।
জাফর সাহেব ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলে হরেক পদের খাবার
দেখে আমার স্ত্রীর বেশ প্রশংসা করলেন।
তারপর একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লেন।
ভদ্রলোক আমার বয়সেরই হবে,হয়তো আমাদের দু’জনের
ভিতরে কয়েকবছরের ব্যবধান।
জাফর সাহেব খাবার মুখে দিয়ে বললেন,” আপনার স্ত্রী, সন্তান
ওরা কোথায়? কাউকে দেখছি না যে?”
আমি নীলাকে ডাক দিতেই মাসি আর নীলা দু’জনে দরজার মুখে
এসে দাঁড়ালো।
জাফর সাহেব খাবার খেতে খেতে নীলার দিকে তাকিয়ে
বললো,”আপনি অনেক সুন্দর রান্না করেন,অনেকবছর পর আজ
বাঙ্গালী খাবার খাচ্ছি তাও অনেক তৃপ্তি করে।”
নীলা হেসে জবাব দিলো,”আপনি আসবেন শুনে এই অল্পকিছু
রান্না করা হয়েছে ভাইয়া।আপনার ভাই যদি আমাকে আগে বলতো।
আপনারা বিলেতি মানুষ,আমাদের দেশীয় খাবার তো ভুলেই
গিয়েছেন একবারে।”
জাফর সাহেব বললেন,”এতো খাবার সব আমার জন্য রান্না
করেছেন,আগে জানলে তো দুদিন না খেয়ে থেকে তারপর
আসতাম।”
জাফর সাহেবের কথা শুনে যা বুঝলাম,তিনি খুব মজার মানুষ। সেই
সাথে বেশ ভোজনপ্রিয়।
খাবার খাওয়া শেষ করে জাফর সাহেবকে রুমে বিশ্রাম নিতে
বলে আমি আবরারকে নিয়ে আসলাম।আবরারাকে পেয়ে জাফর
সাহেব আরো বেশি খুশি হলেন।
আবরারের আদর মাখানো কথার ঝুড়িতে জাফর সাহেবকে
আরো বেশি মুগ্ধ করলো।
খুব কম সময়ে দু’জনে অনেক ভালো বন্ধু হয়ে গেলো।
আমি মনে মনে যা সন্দেহ করেছিলাম,লোকটাকে দেখে
তো সেরকম লাগছে না। ভদ্রলোক বেশ সহজ-সরল আর সাদা
মনের মানুষ।
বিকেলের দিকে একটা জরুরী কাজে বের হওয়ার নাম করে
জাফর সাহেবের সাথে তাঁর বাড়িতে আসার জন্য বার হলাম।
বাড়ির সামনে আসতেই ভদ্রলোক একটাবার পুরো বাড়িটার দিকে
তাকালেন,তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পকেট থেকে চাবিটা
বার করে গেইটের তালা খুললেন।
দীর্ঘদিন গেইটটা বন্ধ হয়ে থাকাতে,সম্পূর্ন খুললো না।
সামান্য সরিয়ে দিয়ে দু’জনে ভিতরে ঢুকলাম।
এক পা এক পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর জাফর
সাহেব এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে।
হয়তো পুরনো স্মৃতিগুলো আওড়াচ্ছেন তিনি।
বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালেন, তারপর আমার
দিকে তাকালেন ভদ্রলোক।
লক্ষ্য করলাম,তার চোখের কোণে জল জমে গিয়েছে।
ভদ্রলোক ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন,” জানেন তো, এই বাড়িটা
আমার অনেক সখের একটা বাড়ি। বাড়িটার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে
আমাদের স্মৃতি লুকিয়ে আছে।
ঐযে ওখানে আদ্রিতাকে নিয়ে রোজ বিকেলে খেলা
করতাম।
আর আমার স্ত্রী বসে বসে আমাদের বাবা-মেয়ের খেলা
দেখতো।
সব হারিয়ে গিয়েছে,সবকিছুই এখন শুধু স্মৃতি। অনেকবার আসতে
চেয়েছি এইবাড়িটাতে,কিন্তু আসতে মন চায়নি।
কেন যানি মনে হয়,এই বাড়িতেই আমার স্ত্রী আর মেয়ে
আজও লুকিয়ে আছে।
ঐ বেয়াদব কেয়ারটেকার টাকে যদি কোনোদিন চোখের
সামনে পাই,সেইদিনই গুলি করে মারবো তাকে।
আমার স্ত্রীকে নিয়ে ওতো ভাবি না,একজন বেইমানকে নিয়ে
ভেবে কষ্ট পেতে চাইনা আমি,তবে আমার মেয়েটার জন্য
খুব কষ্ট হয়,না জানি কেমন আছে কোথায় আছে মেয়েটা?”
জাফর সাহেবের কথাগুলো শুনে নিজের কাছেই খুব খারাপ
লাগছে,এতো সহজ সরল একজন মানুষকে কিভাবে তাঁর স্ত্রী
এতোবড় একটা ধোঁকা দিলো?
লোকটার আজ সব কিছু থাকলেও তাঁর জীবনে ভালোবাসাটার
বড্ড অভাব।
জাফর সাহেব আবার বললেন, “আপনার গাড়িটা আমাকে দিবেন,আমার
একটু কেনাকাটার দরকার ছিলো।
এসেই যখন পড়েছি,কিছুদিন কাটিয়ে যেতে চায় আপনাদের
সাথে। আবরারের সাথে।”
আমি বললাম,”এভাবে বলছেন কেন,আপনি তো আমার বড়
ভাইয়ের মত।
আপনার যে কয়দিন মন চায়,আপনি থাকবেন। বরং আপনি থাকলে
আমাদেরই আরো ভালো লাগবে।”
জাফর সাহেব হাসলেন,তারপর বললেন,”তাহলে চলুন। দিনের
আলো ফুরানোর আগেই কেনাকাটা করে আসি।
কালকে সকালে বাড়িটা ভালো করে দেখে তারপর বাকি কথা
হবে।”
আমিও আর জোর করলাম না।
দু’জনেই বেরিয়ে আসলাম। তারপর আমার গাড়ির চাবিটা দিয়ে
বললাম,”আমার ড্রাইভার কি যাবে আপনার সাথে?”
“না আমি একাই যেতে পারবো। একটা সময় তো এখানেই থাকতাম
আমি,পথে ঘাট সব পানির মত মুখস্থ আমার।”
কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো জাফর সাহেব।
সন্ধ্যার একটু পরে জাফর সাহেব ফিরলো।
সাথে দেখলাম আবরারের জন্য গাড়ি ভর্তি খেলনা।
এসব দেখে বললাম,”এসব কি কিনেছেন? আপনি না বললেন
আপনার জন্য কেনাকাটা করবেন?”
“এগুলোই আমার, আবরার আর আমি খেলা করবো এগুলো
দিয়ে।”
বলেই হেসে আবরারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
আবরার তো নতুন খেলনা পেয়ে মহাখুশি।
ভদ্রলোকের এমন পাগলামি দেখে বেশ খানিকটা কষ্টও
লাগলো। সন্তান হারানো পিতা হয়তো আজকে নতুন
আরেকজনকে সন্তানকে পেয়ে দুঃখটাকে ভুলবার চেষ্টা
করছে।
হয়তো আবরারের ভিতরে তাঁর মেয়েকে খুঁজে
পেয়েছে। সেই জন্যই একটু বেশি আদর করছে।
রাতে খাওয়া দাওয়া করার পর সবাই মিলে অনেক মজা করলাম।
একাকিত্ব কাটাতে পেরে জাফর সাহেব যেন আজকে একটু
বেশিই খুশি,আমাদের সবাইকে পেয়ে।
রাত একটু গভীর হলে জাফর সাহেব বললেন,”আজকে অনেক
কথা-বার্তা হলো।অনেকদিন পর আজ এতো সুন্দর একটা সময় পার
করলাম। আসলেই আপনারা অনেক ভালো। বিশেষ করে ভাবির
হাতের রান্নাটা।
আমি চলে গেলেও হয়তো এগুলো আমার মন থেকে
কখনো হারাবে না।”
কথাবার্তার এক পর্যায়ে আবরার বললো,”মা আমি আজকে নতুন
আংকেলের সাথে ঘুমাবো।”
নীলা বকা দিতে গেলে জাফর সাহেব বললেন,”থাকুক না আমার
সাথে,একটাদিনই তো।
আমারো ভালো লাগবে,আর রাতটাও কেটে যাবে আবরারের
সঙ্গে খুনসুটি করতে করতে।
আবরারকে জাফর সাহেবের সাথে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা
আমাদের রুমে চলে আসলাম।
আমাদের রুমের ঠিক অপরপ্রান্তে জাফর সাহেবের থাকার
ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আবরার, জাফর সাহেবের রুমে আছে দেখে দরজার পাল্লা দুটি
এমনিতেই ভিজিয়ে রাখলাম।যাতে করে রাতে আবরারের
আসতে মন চায়লে সহজেই এই রুমে চলে আসতে পারে।
হঠাৎ করে হাল্কা বাতাসে দরজার পাল্লা দুটি নড়ে উঠাতে ঘুম
ভেঙ্গে গেলো আমার।
ঘুম ঘুম চোখে একটাবার দরজা দিয়ে সামনের রুমটাতে তাকাতেই
দেখলাম,সামনের রুমের দরজাটাও খোলা। রুমের ভিতরে
আলো জ্বলছে। হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সময়টাকে দেখে
নিলাম একটাবার, রাত দুটো বেজে ত্রিশ মিনিট।
এতো রাতে রুমে আলো জ্বলছে,তাহলে কি জাফর সাহেব
এখনো ঘুমায় নি?
আমি পানি খাওয়ার জন্য উঠে ডাইনিং এ গিয়ে ফেরার সময় রুমে
একটাবার উঁকি দিতেই দেখলাম,রুমে আবরার বা জাফর সাহেব
দু’জনেই কেউই নেই। ভাবলাম হয়তো বেলকনিতে আছে,
বেলকনিতে গেলাম,সেখানেও কেউ নেই। একে একে
পুরো বাড়িতে খুঁজলাম,আবরার আর জাফর সাহেব দু’জনের
কেউই নেই কোথাও।
মনের ভিতরে অজানা একটা ভয় চেপে বসলো।
নীলাকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সদর দরজার
কাছে আসতেই হঠাৎ করে চোখ পড়লো রাস্তার ওপাশে থাকা
বাড়িটার দিকে।
উপরের বেলকনি দিয়ে আলোর রশ্মি ফিকে বের হয়ে
এসেছে খানিকটা।
জাফর সাহেব কি তাহলে ঐ বাড়িতে গিয়েছে আবরারকে নিয়ে।
কিন্তু এতোরাতে ঐ বাড়িতে কি কাজ থাকতে পারে তার,আর তাও
আবার আবরারকে সাথে নিয়ে।
তাহলে কি আবরার আজকেও আবার ঐ বাসার বেলকনিতে কাউকে
দেখেছে?
ভয়টা আরো গাঢ় হতে লাগলো।
কোনোকিছু না ভেবে দ্রুতগতিতে সেদিকে হাঁটা শুরু করে
দিলাম।
বাড়ির গেইটের তালা খোলা,গেইট সরিয়ে ভিতরে ছুটে গিয়ে
সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
বাড়ির ভিতরে কে যেন গম্ভীরস্বরে একনাগাড়ে কিছু একটা পাঠ
করে চলেছে।
ভাষাগুলো অনেকটাই অস্পষ্ট।
দরজাতে হাত দিতেই দরজার পাল্লা দুটি দুদিকে ফাঁক হয়ে সরে
গেলো।
দরজা খুলে যেতেই চোখ কপালে উঠলো আমার।
ড্রয়িংরুমের মাঝখানে সারি সারি কতকগুলো কাঠ গোল করে
সাজানো মস্তবড় একটা অগ্নিকুণ্ডে আগুন দাউদাউ করে
জ্বলছে। আর অগ্নিকুন্ডের সামনে দন্ডায়মান একটা ভয়ংকর মুর্তির
পায়ের নিচে বসে আছে একজন তান্ত্রিক। পরণে লাল
কাপড়ের এক টুকরো পোষাক,বলতে গেলে অর্ধনগ্ন
অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করে ধ্যানে মত্ত আছে সে।
কপালে লাল-সাদার তিলক লাগানো,গলায় ঝুলছে রুদ্রাক্ষের মালা।
আগুনের আঁচে মুখটা চিনতে খুব একটা কষ্ট হলোনা আমার।
লোকটা আর কেউ নয়,সকালে গাড়ি চড়ে আসা কোর্ট-টাই
পরিহিত সেই ভদ্রলোক, মানে এই বাড়ির মালিক জাফর চৌধুরী!!
একি এই ভদ্রলোক এই বেশভূষা কেন পরেছে,আর এইসবই বা
কেন করছে? আর এই ভয়ংকর মূর্তিটায় বা কোত্থেকে
এলো?
সেদিন যখন এসেছিলাম,তখন তো এসবের কিছুই ছিলো না
এখানে।
তাহলে কি বিকালে তখন কেনা-কাটার নাম করে এইসব জিনিসপত্র
কিনতে গিয়েছিলো লোকটা?
এতো প্রশ্নের মাঝেও যখন দেখলাম ভয়ংকর মূর্তিটার দু পায়ের
মাঝখানে আমার ছেলে আবরার অবচেতন অবস্থাতে পড়ে
আছে,তখন আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলাম না।
ছুটে গিয়ে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললাম,”এইসব কি হচ্ছে? আর আমার
ছেলেকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? একজন মুসলিম
হয়ে এ কার পূজা করছেন আপনি?”
লোকটা এবার চোখ খুলতেই ভিতরটা ধক্ করে উঠলো আমার।
চোখের মনি দুটো জলজল করে জ্বলছে তার আগুনের মত।
যেন জ্বলন্ত দুটো আগ্নেয়গিরি চোখের মনিতে বসানো
আছে।
আমি ভয় পেলেও দমে না গিয়ে ছুটে গেলাম আবরারকে
নেওয়ার জন্য।
সামনে বসে থাকা লোকটা এবার অকথ্য ভাষাতে গালি দিয়ে আমার
দিকে হাত বাড়াতেই আমি ছিটকে গিয়ে পড়লাম অগ্নিকুন্ডের
একপাশে।
ব্যাথায় ককিয়ে উঠে কোনরকমে আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে
বললাম,”আমার ছোট্ট ছেলেটা কি ক্ষতি করেছে, তাকে কেন
নিয়ে এসেছেন এখানে?”
লোকটা বজ্রকণ্ঠে বলে উঠলো,”যেখানে স্বার্থ হাসিলের
জন্য নিজের মেয়েকে সমর্পণ করতে একটুও বুক কাপেনি
আমার,সেখানে তোর ছেলে আর এ এমন কি!!
শোন তাহলে, এখানে তুই আমাকে নিয়ে আসিস নি,বরং আমি
নিজে থেকে এসেছি তোর ছেলের জন্য। এই বাড়িতে ঠিক
এইখানে আমার মেয়েকে এভাবে বলি দিয়েছিলাম,আর আমার
স্ত্রী বাঁধা দিতে এসেছিলো দেখে তাকেও খুন করেছিলাম।
আর তারপর তাঁদের দু’জনকে উপরের ঘরের আলমারিতে
ঢুকিয়ে রেখে দোষ চাপিয়ে দিয়েছিলাম বাড়ির কেয়ারটেকার
সুমনের নামে। বেচারা খুব ভালো মনের মানুষ ছিলো,কিন্তু
আমার কাজে যে বাঁধা দিবে তাকেই যে মরতে হবে।
তাই ও বেচারাকেও মরতে হলো।
সবাই ভাবলো,আমার বউ-মেয়েকে নিয়ে সুমন ভেগে
গিয়েছে। আর আমিও নাটক বানিয়ে দেশ ছেড়ে চলে
গেলাম। এতোদিন তো আমার সবকিছু ভালোই চলছিলো,তবে
এখন যে আবার শয়তান মাকে সন্তুষ্ট করতে হবে।
আর তখনি তুই ফোন দিয়ে নিজের ছেলের বিপদ ডেকে
আনলি। আজকে তোদের দু’জনকে শয়তান মায়ের নামে বলি
দিয়ে আমার কার্যসিদ্ধি সাধন করবো। একসাথে জোড়া বোলি
পাবে মা আমার।”
বলেই হাসতে লাগলো লোকটা।
আমি সেদিকে ছুটে যেতে গেলেও যেতে পারলাম না।
মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার পা দুটি শক্তকরে মেঝের
সাথে আটকিয়ে ধরে রেখেছে।
লোকটা একমনে মন্ত্র পড়তে লাগলো,আর অগ্নিকুন্ডের
ভিতরে ঘি আর ধুপ ছিটাতে লাগলো।
খানিকক্ষন মন্ত্র পড়ার পর আগুনের ভিতর থেকে একটা
ঝলসানো ছুরি বার করে দাঁড়িয়ে বললো,”মা তোর মনোবাসনা
পূর্ণ হউক সেই সাথে আমারো।
বলেই ছুরিটা আবরারের গলাতে চালাতে যাবে ঠিক তখনি একটা
চিৎকার দিয়ে উঠলো লোকটা।
তাকিয়ে দেখলাম,একজন মহিলা লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
চুলগুলা এলোমেলো হয়ে আগুনের উত্তাপে যেন ছড়িয়ে
ছিটিয়ে আছে চারদিকে।
বজ্রধ্বনিতে সেই নারীকণ্ঠ বলে উঠলো,”তুই নিজের
ইচ্ছাতে আসিস নি এখানে,তোকে আমি নিয়ে এসেছি।”
লোকটা এবার ভয়ে মুচড়ে গিয়ে বললো,”তুমি! না না এ কিভাবে
সম্ভব! তুমি তো মরে গিয়েছো,আমি নিজ হাতে তোমাকে খুন
করেছি।”
নারীকণ্ঠটা হেসে বললো,”ভয় পেওনা,তোমার না
আমাদেরকে ছেড়ে থাকতে ভিষণ কষ্ট হয়,তাই তো
তোমাকেও আমাদের সাথে নিয়ে যেতে এসেছি।
আদ্রিতাও যে অনেকদিন তাঁর বাবার আদর পায়নি। দেখো
দেখো তোমার মেয়েকে দেখো,তোমার আদর পাওয়ার
জন্য কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে।”
কথাটা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম সেদিনের
সেই ছোট্ট মেয়েটা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে।
গলাতে তীক্ষ্ম সুরির দাগ বসানো।
রক্তের কালচে ছাপে ভয়ংকর হয়ে আছে সেই দাগ।
মেয়েটা নেমে এসে জাফর সাহেবে কাছে গিয়ে
বললো,”বাবা যাবে না আমাদের সাথে। আমার যে তোমাকে ছাড়া
ভিষণ কষ্ট হয় থাকতে বাবা। যাবে না আমাদের সাথে?”
বলেই আরো কাছে এগিয়ে গেলো লোকটার।
জাফর সাহেব এবার প্রাণের ভয়ে পালাতে গেলে নিজেই পা
ফসকে গিয়ে জলন্ত অগ্নিকুন্ডের ভিতরে পড়ে গেলো।
দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা অাগুন ধিরে ধিরে জাফরের শরীর
থেকে মাংস গুলোকে ঝলসে দিতে লাগলো।
জাফরের স্ত্রী আর মেয়ে দুজনে অপলক দৃষ্টিতে সেই
বিভীষিকাময় দৃশ্যটা যেন উপভোগ করছে।
জাফর আর্তনাদ করতে করতে একটা সময় জ্বলন্ত আগুনের
মাঝে হঠাৎ করে হারিয়ে গেলো।এই বিভীষিকাময় গা হীম করা
দৃশ্য যেন আমার চোখ আর নিতে পারছে না।
আমি ছুটে গিয়ে আবরারকে কোলে নিয়ে চলে আসতে
যাবো,তখন জাফরের স্ত্রী বলে উঠলো,”আপনাদের এই
কয়দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি। আসলে আপনাদেরকে আমাদের
অস্তিত্বটাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম। এতবছর সবার কাছে মিথ্যে
বদনাম নিয়ে মরে যাওয়ার পরও একমূহুর্ত শান্তিতে থাকতে পারিনি
আমরা মা-মেয়ে। যে মানুষটাকে আমি অন্ধ্যের মত
ভালোবেসেছিলাম,সেই মানুষটাই কিনা মানুষ নামের নরপিশাচ
ছিলো। লন্ডনের একটা ছোট্ট শহরে শয়তানের পূজা এখনো
চলে,নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিবার একটা করে নবজাতক
শিশুর বোলি দিতে হয়। বিনিময়ে সে যায় চায় তাই পায়। আমার
স্বামীও লোভের তাড়নাতে এতটাই অন্ধ্য হয়ে গিয়েছিলো
যে শেষমেষ মুসলিম ধর্মের হওয়ার পরও শয়তানের পূজো
শুরু করে।
লন্ডনে কাজটা করা রিস্কি ছিলো,তাই সে ঠিক করে এইখানে
একটা বাড়ি বানিয়ে বাড়ির ভিতরেই সে এই কর্মকান্ড গুলো করবে।
আর বোলি শেষে মৃত লাশগুলো বাগানের কুয়োতে
ফেলে দিবে।কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাবেনা। আর সেইজন্য
যখনি ওর কাউকে বোলি দেওয়ার প্রয়োজন পড়তো তখনি এই
বাড়িটাতে এসে একটা করে বোলি দিয়ে আবার ফিরে যেতো
আমাদেরকে নিয়ে। এসব দেখেও চুপ ছিলাম,শুধু ভালোবাসতাম
দেখে।
কিন্তু যখন শুনলাম,আমাদের নিজের মেয়েকে বোলি
দিবে,তখন আর মা হয়ে আমি চুপ থাকতে পারিনি। আর সেদিনের
সেই বাধা দেওয়াতেই একসাথে আমাকে আর আদ্রিতাকে খুন
করে ঐ নরপিশাচটা।
আমাদের দু’জনকে মেরে ঐ নরপিশাচটা আলমারিতে ঢুকিয়ে
রেখেছিলো। তিলে তিলে আমাদের শরীরটা পঁচে গলে
নষ্ট হয়েছে।
কাঠপোকা এসে খুবলে খুবলে খেয়েছে আমাদের
ফেলে যাওয়া শরীরের মাংসগুলা।
আর সেইজন্যই আমাদের মুক্তি হয়নি। তবে আজ থেকে আমরা
মুক্ত।
আজ থেকে আর কেউ আপনাদের বিরক্ত করবেনা। আমাদের
কাজ শেষ,আর কাউকে কখনো এ বাড়িতে দেখতে পাবেন না।”
“জাফর তার প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে। তবে মানুষ অর্থসম্পদের
মোহে পড়ে যে এতটা পিশাচ হয়ে যেতে পারে,তা এই
লোকটাকে না দেখলে কখনো জানতেই পারতাম না।
ঐ বদমাশ লোকটা আপনার সম্পর্কে এমনভাবে মিথ্যা গুজব
ছড়িয়েছে এলাকার মানুষের কাছে,যে কেউ শুনলেই সে
আপনাদেরকেই দোষারোপ দিবে। এমনকি আমি নিজেও প্রথম
শুনে আপনাকে কতকিছুই না মন্দ বলেছি। “
কথাগুলো বলে আবরারকে নিয়ে চলে আসছিলাম,এমন সময়
পিছন থেকে ছোট্ট মেয়েটা বলে উঠলো,”আমি কিন্তু
আবরারের সঙ্গে মাঝেমাঝে খেলতে আসবো।”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে বললাম,”এসো।”
তারপর আবরারকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।
নীলা এখনো ঘুমাচ্ছে,আবরারকে মাঝখানে রেখে
রোজকার মত আরেকপাশে আমি শুয়ে পড়লাম আমি।
পরদিন সকালে
“এই আশিক,জাফর ভাইয়া কোথায়?”
“তোমার জাফর ভাইয়া তো সেই ভোরে উঠেই চলে
গিয়েছে। কি যেন একটা কাজ পড়ে গিয়েছে,তাই আর থাকতে
পারলো না।”
“একটাবার বলে তো যেতো,আমি সারারাত ধরে কতকিছু ভেবে
রেখেছি,নতুন নতুন রান্না করবো বলে।”
বিড়বিড় করে বললাম,”
তুমি সারারাত রান্নার রেসিপি ভাবছিলে,আর আমরা বাপ ছেলে ভূতের
সাথে কুতকুত খেলছিলাম।”
“কি বললা?”
“কোই কিছু না তো,আচ্ছা জাফর নেই তো কি হয়েছে,একটাদিন
নিজের স্বামীকেই না হয় ভালো মন্দ রেঁধে খাওয়াও একটু।”
নীলা চোখ উল্টিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলে, আমি
আবরারের দিকে তাকালাম।
আবরার এখনো ঘুমাচ্ছে। ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে
বললাম,”রাতে এতোকিছু ঘটে যাওয়ার পরও ছেলেটা কিভাবে
ঘুমাচ্ছে দেখো।”
কথাটা বলে আবরারকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমালাম।
সমাপ্ত….


তো আজকে এই পর্যন্তই । মানুষ মাত্রই ভুল হয় । তাই ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়েন । আশা করি পোস্টটি সবার ভালো লেগেছে । কোনো কিছু না বুঝতে পারলে কমেন্টে জানান । আপনি চাইলে এই লিংক এ ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে join করতে পারেন । আর যেকোনো প্রয়োজনে ফেসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন ।



The post নিয়ে নিন চমৎকার একটা ভৌতিক গল্প [শেষ অংশ] appeared first on Trickbd.com.



from Trickbd.com https://ift.tt/xVXdy0M
via IFTTT
Share This Article :
Protiva

TAMBAHKAN KOMENTAR

3621301750812344269