মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ালেখা করা মানেই নিজেকে নৌ পেশায় সম্পৃক্ত করার সুবর্ণ সুযোগ। এ পেশার সব চাকরিই সৌখিন ও আনন্দময়। সমুদ্রযাত্রা কে না ভালোবাসে। আপনিও পারেন আপনার স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার হিসেবে এ সৌখিন পেশাকে বেছে নিতে।
Q. মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কি ?
বিশ্ব অর্থনীতির বড় কর্মকাণ্ডের ৯০ শতাংশই পরিবাহিত হয় শিপিং ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে। আর সেই শিপিংয়ের পরিবহন হচ্ছে জাহাজ। অর্থনীতিতে বার্ষিক আয়ের প্রায় ২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার আসে শিপিং খাত থেকে। সারাবিশ্বে প্রায় ৫ হাজার জাহাজ প্রতিদিন প্রায় ৬০০ কোটি টন পণ্য নিয়ে ১৫০টির বেশি দেশে ওয়ার্ল্ড ফ্লিট নিবন্ধিত হয়। প্রায় ১৩ লাখ সি ফেরিয়ার্স সারাবিশ্বে শিপিংয়ে কর্মরত। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মূল বিন্দু দখল করে রেখেছেন মেরিনাররা।
Q. মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী ?
সাধারণত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের তিন রকমের চাকরি হয়ে থাকে। নেভিগেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিও অ্যান্ড অয়্যারলেস কমিউনিকেশন।
নেভিগেশন : কার্গো ওঠানামা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেভিগেশন ডিপার্টমেন্টের। জাহাজের নাবিকদের নিরাপত্তাও দেখতে হয় এই বিভাগকে। জাহাজের ক্যাপ্টেন হলো নেভিগেশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান। খারাপ আবহাওয়ায় জাহাজ কোন পথে এবং কিভাবে যাবে, তা ঠিক করেন ক্যাপ্টেন। তাদের সাহায্য করেন এই বিভাগের অন্যান্য ইঞ্জিনিয়াররা।
ইঞ্জিনিয়ারিং : জাহাজের যান্ত্রিক অবস্থা দেখাশোনার দায়িত্ব রয়েছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের। ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার করতে হয় তাদের।
রেডিও অ্যান্ড অয়্যারলেস কমিউনিকেশন : টেলিফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনা করেন এই বিভাগের কর্মীরা। সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে জাহাজের কেটারিং যোগাযোগ করেন এই বিভাগ।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা:
১. বয়স হতে হবে ২২ বছর এর কম।
২. SSC ও HSC তে বিজ্ঞান বিভাগের হতে হবে।
৩. SSC ও HSC উভয় পরীক্ষায় নূন্যতম ৩.৫০ পয়েন্ট থাকতে হবে।
৪. HSC তে অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান ও উচ্চতর গনিতে A- অর্থাৎ ৩.৫০ থাকতে হবে।
৫. HSC তে ইংরেজিতে নুন্যতম B অর্থাৎ ৩.০০ থাকতে হবে। (বি গ্রেড না থাকলে IELTS ৫.৫ স্কোর থাকতে হবে)।
৬. উচ্চতা : মহিলাদের জন্য ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং পুরুষদের জন্য ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ।
৭. BMI অনুযায়ী ওজন হতে হবে।
৮. চোখের দৃষ্টি ৬/৬ (নটিক্যাল) ও ৬/১২ (ইঞ্জিনিয়ারিং)।
৯. অবিবাহিত হতে হবে।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং লিখিত পরীক্ষাঃ ১০০ নম্বর এবং জিপিএ ২০০ নম্বর
পদার্থ-২৫ (প্রশ্ন ৫০ টি)
উচ্চতর গণিত-২৫ (প্রশ্ন ৫০ টি)
ইংরেজি-২৫ (প্রশ্ন ৫০ টি)
বাংলা-১০ (প্রশ্ন ২০ টি)
সাধারণ জ্ঞান-১৫ (প্রশ্ন ৩০ টি)
প্রতিটি প্রশ্নের মার্ক ০.৫। অর্থাৎ ১০০ মার্কের পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে ২০০ টি।
জিপিএঃ এসএসসির ৭৫ এবং এইচএসসি ১২৫ সহ মোট ২০০ নম্বর।
পাশ নম্বরঃ ৪০%
মোট আসনঃ ৭৬৩।
সরকারি = ৪০০,
বেসরকারি = ৩৬৩।
ছাত্রীদের জন্য ২৫ ।
আবেদন ফিঃ ১০৫০ টাকা।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির অধীনে ২টি বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া যায়।
১। Department of Nautical Science
1. তিন বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব সাইন্স ইন মেরিটাইম
2. ২ বছর একাডেমিতে পড়াশোনা এবং ১ বছর ট্রেনিং
২। Department of Marine Engineering
1. ৩ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
2. ২ বছর একাডেমিতে পড়াশোনা এবং ১ বছর ট্রেনিং
ভর্তির সময় ৫০ হাজার টাকা দিতে হয় এককালীন।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ভর্তি যোগ্যতা :
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ওপর সরকারি ও বেসরকারি প্রতেষ্ঠানে রয়েছে ৪ বছর ও দু’বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স। সব প্রতষ্ঠিানে ভর্তি হতে চাইলে প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোনো বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির আবদেন করতে হবে এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। উল্লেখ্য, একজন শিক্ষার্থী পরপর তিন বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ব্যতিক্রম পতেঙ্গা নেভাল একাডেমিতে এইচএসসি বা আলিম পরবর্তী শিক্ষার্থীরা কেবল আবেদন করতে পারবে।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীতে আবেদনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে। উভয় পরীক্ষায় আলাদাভাবে ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থ ও গণিত বিষয়ে আলাদাভাবে ৩.৫০ জিপিএ থাকতে হবে। ইংরেজি বিষয়ে কমপক্ষে ৩.০০ জিপিএ অথবা আইইএলটিএস স্কোর হতে হবে ৫.৫।
এ ছাড়া ক্যাডেট হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মেরিন ক্যাডেট হিসেবে ছেলেদের কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও মেয়েদের ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিশক্তির ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে ক্যাডেট ভর্তি করা হয়। মেরিন ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য ৬/৬ এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি ৬/১৮ হতে হবে।
এসবের বাইরে আবেদনকারীকে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।
> PORASHONABD.COM
পরীক্ষার কেন্দ্র : লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র এবং আসনবিন্যাস www.macademy.gov.bd ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য ও মৌখিক পরীক্ষা : লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এরপর অংশ নিতে হবে শারীরিক ও মৌখিক পরীক্ষায়। মেরিন একাডেমীতেই অনুষ্ঠিত হবে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই ও সাঁতার পরীক্ষা। এ ধাপ দুটি পেরোনোর পর অনুষ্ঠিত হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের পাশাপাশি মেরিন একাডেমীর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম ২৭৫ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ ?
সরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খরচ একেবারেই কম। এখানে খরচ পড়বে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার খচর একটু বেশি। এখানে প্রতিষ্ঠান ভেদে খচর পড়বে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ কি কি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ?
সমুদ্রগামী জাহাজের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। যেমন : জাহাজ চালনা, নৌ-প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অথবা হোটেল সার্ভিস ইত্যাদি। তিন বছরের কোর্স শেষে এসব বিভাগের যেকোনো একটিতে যোগ দেওয়া যায়। তবে যাঁরা প্রি-সি নটিক্যাল সায়েন্সে পড়াশোনা করেন, তাঁরা জাহাজ চালনা বিভাগে যোগদান করুন। প্রি-সি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্নকারীরা নৌ-প্রকৌশল বিভাগে যোগ দিন।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি :-
কোর্সটিতে দুই বছরের তাত্তি্বক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এক বছর সরাসরি সমুদ্রগামী জাহাজে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই এক বছরে প্রতিটি ক্যাডেট মাসিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার বেতন পাবেন (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা)।
কোর্স সম্পন্ন করার পর সাত থেকে আট বছরের মধ্যে জাহাজের ক্যাপ্টেন অথবা চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একজন ক্যাপ্টেন অথবা চিফ ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতন ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট লাখ ২০ হাজার থেকে ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা)।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ক্যারিয়ার সম্ভাবনা :
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার গড়তে অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেমন- স্বল্প খরচে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, দুবাই ইত্যাদি দেশে চাকরির পাশাপাশি উচ্চশিক্ষাও নিতে পারবেন। বাংলাদেশ শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন, খুলনা শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও ডকইয়ার্ডে রয়েছে চাকরির ব্যাপক চাহিদা। বাংলাদেশ নেভি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি ইত্যাদি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়ার রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। দেশী-বিদেশী জাহাজে নাবিকসহ ভালো মানের চাকরি রয়েছে।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ আয় রোজগার :
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনার পর বেকার থাকা বা কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখানে আয়-রোজগারের বিষয়টা প্রতিষ্ঠানভেদে হয়ে থাকে। অনেকটা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে। নারায়ণগঞ্জ মেরিন ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ এম আকরাম আলী জানান, একজন ছাত্র পেশাগত জীবনে বিদেশী প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করতে পারবে ও দেশি জাহাজ বা অন্য প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারে। বিদেশী জাহাজে চাকরিরত অফিসার মাসুদ আহমেদ জানান, এখানে থাকা-খাওয়া ও বেতন সবকিছুই মানসম্মত।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ উচ্চশিক্ষা :
দেশে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করে আপনি উচ্চশিক্ষা বা স্কলারশিপ নিতে পারবেন। উচ্চশিক্ষার জন্য আমাদের দেশে বুয়েটে এমএস/এমএসসি ও পিএইচডি করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক এ পেশার ওপর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এছড়াও বিদেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্বলারশিপ নিতে পারবেন। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি পার্টটাইমে চাকরির সুযোগ আছে। সুতরাং দেশের জাহাজ শিল্পের গুণগত মান বিকাশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে এ সৌখিন ও আনন্দময় পেশায় গড়ুন আপনার স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ কাজের ক্ষেত্র :
তিন বছরের কোর্স শেষে একজন ক্যাডেট লাভ করবেন প্রি-সি মেরিন (মার্চেন্ট মেরিন) সার্টিফিকেট। সমুদ্রগামী জাহাজ ছাড়াও দেশি-বিদেশি নৌ বন্দর, জাহাজ ব্যবস্থাপনা সংস্থা, পাওয়ার প্লান্টেও কাজের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া রয়েছে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, দেশি-বিদেশি তেল কম্পানিসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজের সুযোগ।
তো এই ছিলো মেরিন একাডেমি ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসমূহ । আপনার স্বপ্ন যদি হয় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে জাহাজে চড়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিন আজ এখন ঠিক এই মুহুর্ত থেকেই।
পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল ইনফরমেশন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের পিডিএফ পেতে ও ফ্রি MCQ এক্সাম দিতে আজই জয়েন করো আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে t.me/academic_care ।। পোস্টটি প্রথম প্রকাশিত হয় www.porashonabd.com এ ।
The post মেরিন একাডেমি ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসমূহ appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/b0JmWNk
via IFTTT
Emoticon